তাসের দেশ
চতুর্থ দৃশ্য
শ্রীমতী হরতনী টেক্কার প্রবেশ

হরতনী।                                         গান

আমি   ফুল তুলিতে এলেম বনে,

    জানি নে কী ছিল মনে।

এ তো ফুল তোলা নয়,    এ তো    ফুল তোলা নয়,

    বুঝি নে কী মনে হয়,

    জল ভরে যায় দু নয়নে॥


রুইতনের সাহেবের প্রবেশ

রুইতন। এ কী, হরতনী তুমি এখানে? খুঁজতে খুঁজতে বেলা হয়ে গেল যে।

হরতনী। কেন, কী হয়েছে, কী চাই।

রুইতন। তোমাকে ডাক পড়েছে রাজসভার গরাবুমণ্ডলে।

হরতনী। বলো গে, আমি হারিয়ে গেছি।

রুইতন। হারিয়ে গেছ?

হরতনী। হাঁ, হারিয়ে গেছি, যাকে খুঁজছ তাকে আর খুঁজে পাবে না, কোনোদিনই।

রুইতন। এ কী কাণ্ড। এ কী দুঃসাহস। এই বনে এসেছ তুমি? জান না— নিয়ম নেই?

হরতনী। নিয়ম তো নেই, কিন্তু কার নিয়মে বর্ষাবিহীন তাসের দেশে আজ এমন ঘনঘটা। হঠাৎ সকালে উঠেই দেখি, নীল মেঘ আকাশ জুড়ে। এতদিন তোমাদের দেশের ময়ূর গুনে গুনে পা ফেলত, নাচত সাবধানে, আজ

কেন এমন অনিয়মের নাচ নাচল, সমস্ত পেখম ছড়িয়ে দিয়ে।

রুইতন। কিন্তু, ঘর হতে যার আঙিনা বিদেশ, সেও আজ ফুল তুলতে বেরিয়েছে— এতবড়ো অদ্ভূত কাজ তোমার মাথায় এল কী করে।

হরতনী। হঠাৎ মনে হল, আমি মালিনী, আর-জন্মে ফুল তুলতেম। আজ পুবে হাওয়ায় সেই জন্মের ফুলবাগানের গন্ধ এল। সেই জন্মের মাধবীবন থেকে ভ্রমর এসেছে মনের মধ্যে।

গান

     ঘরেতে    ভ্রমর এল গুন্‌গুনিয়ে।
         আমারে    কার কথা সে যায় শুনিয়ে।
আলোতে    কোন্‌ গগনে       মাধবী জাগল বনে,

     এল সেই    ফুল - জাগানোর খবর নিয়ে।
         সারাদিন    সেই কথা সে যায় শুনিয়ে।
কেমনে রহি ঘরে,             মন যে কেমন করে,