তাসের দেশ
        নাহয় সখীদের মুখে মুখে
সে-নাম দোলা খাবে সকৌতুকে।
         পূর্ণিমারাতে একা যবে
              অকারণে মন উতলা হবে
                     সে-নাম শুনাইব গানে গানে॥

ইস্কাবনী। ভাই, এ কী হল বলো তো এই তাসের দেশে। ঐ বিদেশীরা কী খ্যাপামির হাওয়া নিয়ে এল। মনটা কেবলই টলমল করছে।

টেক্কানী। হাঁ, ভাই ইস্কাবনী, আর দুদিন আগে কে জানত তাসেরা আপন জাত খুইয়ে ঠিক যেন মানুষের মতো চালচলন ধরবে। ছি ছি, কী লজ্জা।

ইস্কাবনী। বলো তো, ভাই, মানুষপনা, এ-যে অনাচার। এ কিন্তু শুরু করেছে তোমাদের ঐ হরতনী। দেখিস নি? আজকাল ওর চলন ঠিক থাকে না একেবারে হুবহু মানুষের ভঙ্গি। কার পাশে কখন দাঁড়াতে হবে তারও সমস্ত ভুল হয়ে যায়, পাড়ায় ঢি ঢি পড়ে গেছে। তাসের দেশের নাম ডোবালে।

চিঁড়েতনীর প্রবেশ

চিঁড়েতনী। কী গো টেক্কাঠাকরুন, শুনেছি, আমাদের নিন্দে রটিয়ে বেড়াচ্ছ। বলছ, আমরা আচার খুইয়ে, ওঠবার বেলায় বসি, বসবার বেলায় উঠি।

টেক্কানী। তা, সত্যি কথা বলেছি, দোষ হয়েছে কী। ঐ-যে তোমার গাল দুটি টুকটুক করছে, রঙ্গিনী, সে কোন্‌ রঙে। আর, ঐ-যে তোমার ভুরুর ভঙ্গিমা, ধার করেছ কোন্‌ বিদেশী অমাবস্যার কাজললতা থেকে। এটা তো সাতজন্মে তাসের দেশের শাস্তরে লেখে না। তুমি কি ভাব’, এ কারো চোখে পড়ে না।

চিঁড়েতনী। মরে যাই! আর, তুমি যে তোমার ঐ সখীটিকে নিয়ে বকুলতলায় বসে দিনরাত কানে কানে ফিস্‌-ফিস্‌ করছ, এটাই কি তাসের দেশের শাস্ত্রে লেখে না কি। ওদিকে-যে গোলাম বেচারা তার জুড়ি পায় না, মরে হায়-হায় ক’রে।

ইস্কাবনী। আহা, গুরুঠাকরুন, উপদেশ দিতে হবে না। চুলে যে রাঙা ফিতেটা জড়িয়েছ ঐ ফিতে দিয়ে তাসের দেশের আচার বিচার গলায় দড়ি দিয়ে মরবে। এতবড়ো বেহায়াগিরি তাসরমণী হয়ে!

চিঁড়েতনী। তা,হয়েছে কী। আমি ভয় করি নে কাউকে, তোমাদের মতো লুকোচুরি আমার স্বভাব নয়। ঐ-যে তোমাদের দহলানী সেদিন আমাকে মানবী ব’লে টিটকারি দিতে এসেছিল, আমি তাকে পষ্ট জবাব দিয়েছি, তোমাদের তাসিনী হয়ে মরে থাকার চেয়ে মানবী হতে পারলে বেঁচে যেতুম।

ইস্কাবনী। অত গুমোর কোরো না গো কোরো না— জান? তোমাকে জাতে ঠেলবে বলে কথা উঠেছে।

চিঁড়েতনী। তাসের জাত তো, আমি তা নিজের হাতে জলাঞ্জলি দিয়েছি, আমাকে ভয় দেখাবে কিসে।

ইস্কাবনী। সর্বনাশ! এমন ধাষ্টমির কথা তো সাত জন্মে শুনি নি। উনি ঢাক পিটিয়ে মানবী হতে চলেছেন। চল্‌ ভাই, টেক্কারানী, কে কোথা থেকে দেখবে, ওর সঙ্গে কথা কচ্ছি, আমাদের সুদ্ধ মজাবে।

[প্রস্থান