আত্মপরিচয় ৩

সেই বিহ্বলতা যদি হয়ে থাকে শেষ,

প্রকৃতির স্পর্শমোহ গিয়ে থাকে দূরে —

কোনো দুঃখ নাহি। পল্লী হতে রাজপুরে

এবার এনেছ মোরে, দাও চিত্তে বল।

দেখাও সত্যের মূর্তি কঠিন নির্মল।

আঘাত-সংঘাত মাঝে দাঁড়াইনু আসি।

অঙ্গদ কুণ্ডল কণ্ঠী অলংকাররাশি

খুলিয়া ফেলেছি দূরে। দাও হস্তে তুলি

নিজহাতে তোমার অমোঘ শরগুলি,

তোমার অক্ষয় তূণ। অস্ত্রে দীক্ষা দেহ

রণগুরু। তোমার প্রবল পিতৃস্নেহ

ধ্বনিয়া উঠুক আজি কঠিন আদেশে।

করো মোরে সম্মানিত নব-বীরবেশে,

দুরূহ কর্তব্যভারে, দুঃসহ কঠোর

বেদনায়। পরাইয়া দাও অঙ্গে মোর

ক্ষতচিহ্ন অলংকার। ধন্য করো দাসে

সফল চেষ্টায় আর নিষ্ফল প্রয়াসে।

ভাবের ললিত ক্রোড়ে না রাখি নিলীন

কর্মক্ষেত্রে করি দাও সক্ষম স্বাধীন।

যে শ্রেয় মানুষের আত্মাকে দুঃখের পথে দ্বন্দ্বের পথে অভয় দিয়ে এগিয়ে নিয়ে চলে সেই শ্রেয়কে আশ্রয় করেই প্রিয়কে পাবার আকাঙ্ক্ষাটি ‘চিত্রা'য় ‘এবার ফিরাও মোরে' কবিতাটি মধ্যে সুস্পষ্ট ব্যক্ত হয়েছে। বাঁশির সুরের প্রতি ধিক্‌কার দিয়েই সে কবিতার আরম্ভ —

যেদিন জগতে চলে আসি,

কোন্‌ মা আমারে দিলি শুধু এই খেলাবার বাঁশি।

বাজাতে বাজাতে তাই মুগ্ধ হয়ে আপনার সুরে

দীর্ঘদিন দীর্ঘরাত্রি চলে গেনু একান্ত সুদূরে

ছাড়ায়ে সংসারসীমা।

মাধুর্যের যে শান্তি এ কবিতার লক্ষ্য তা নয়। এ কবিতায় যার অভিসার সে কে?

কে সে? জানি না কে। চিনি নাই তারে —

শুধু এইটুকু জানি — তারি লাগি রাত্রি-অন্ধকারে