বাউলের গান
করিলেই যে ইংরাজি বাংলা হইয়া যাইবে, এমন কোন কথা নাই।

অতএব, বাঙ্গালা ভাব ও ভাবের ভাষা যতই সংগ্রহ করা যাইবে ততই যে আমাদের সাহিত্যের উপকার হইবে তাহাতে আর সন্দেহ নাই। এই নিমিত্তই সঙ্গীত-সংগ্রহের প্রকাশক বঙ্গসাহিত্যানুরাগী সকলেরই বিশেষ কৃতজ্ঞতাভাজন হইয়াছেন।

Universal Love প্রভৃতি বড় বড় কথা বিদেশীদের মুখ হইতে বড়ই ভাল শুনায়, কিন্তু ভিখারীরা আমাদের দ্বারে দ্বারে সেই কথা গাহিয়া বেড়াইতেছে, আমাদের কানে পৌঁছায় না কেন? –

আয় রে আয়, জগাই মাধাই আয়!

হরিসঙ্কীর্ত্তনে নাচিবি যদি আয়।

ওরে      মার খেয়েচি, নাহয় আরো খাব –

ওরে তবু হরির নামটি দিব আয়!

ওরে মেরেছে কলসীর কানা,

তাই বলে কি প্রেম দিব না – আয়!

বাউল বলিতেছে –

সে প্রেম করতে গেলে মরতে হয়।

আত্মসুখীর মিছে সে প্রেমের আশয়।

গোড়াতেই মরা চাই। আত্মহত্যা না করিলে প্রেম করা হয় না। (পূর্ব্বেই আর একটি গানে বলা হইয়াছে –

যার আমি মরেছে, তার সাধন হয়েছে।

কোটি জন্মের পুণ্যের ফল তার উদয় হয়েছে।)

তার পরে বলিতেছে –

যে প্রাণ করে পণ           পরে প্রেমরতন

         তার থাকে না যমের ভয়।

যে মরে তার আর মরণের ভয় থাকে না। জগৎকে সে ভালবাসে, এই জন্য সে জগৎ হইয়া যায়, সে একটি অতি ক্ষুদ্র “ আমি “ মাত্র নহে, যে, যমের ভয় করিবে – সে সমস্ত বিশ্বচরাচর। অপ্রেমিক বলিবে, এ প্রেমে লাভ কি? ফুলকে জিজ্ঞাসা কর না কেন, গন্ধ দান করিয়া তোমার লাভ কি? সে বলিবে, গন্ধ না দিয়া আমার থাকিবার যো নাই, তাহাই আমার ধর্ম্ম! এই জন্য গন্ধ না দিতে পারিলে জীবন বৃথা মনে হয়। তেমনি প্রেমিক বলিবে মরণই আমার ধর্ম্ম, না মরিয়া আমার সুখ নাই।

লোভী লোভে গণিবে প্রমাদ,

একের জন্য কি হয় আরের মরিতে সাধ।

বাউল উত্তর করিল –

যার যে ধর্ম্ম সেই পাবে সেই কর্ম্ম।

প্রেমের মর্ম্ম কি অপ্রেমিকে পায়?

বাউল বলিতেছে, সমস্ত জগতের গান শুনিবার এক যন্ত্র আছে –

ভাবের আজগবি কল গৌরচাঁদের ঘরে

সে যে অনন্ত ব্রক্ষ্মাণ্ডের খবর, আন্‌ছে একতারে

         গো সখি, প্রেম-তারে।