প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
ফকির। আহা, গুরুদেবের কৃপা। (ছড়াটা মাথায় ঠেকিয়ে চোখ বুজে) শিবোহং শিবোহং শিবোহং। (একটা একটা করে গোটা দশেক খেয়ে দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে) আঃ!
মাখন। কী দাদা, ভালো তো! আমার নাম শ্রীমাখনানন্দ।
ফকির। গুরুর চরণ ভরসা।
মাখন। গুরুই খুঁজে মরছি। সদ্গুরু মেলে না তো। দয়া হবে কি। নেবে কি অভাজনকে।
ফকির। ভয় নেই, সময় হোক আগে।
মাখন। (কান্নার সুরে) সময় আমার হবে না প্রভু, হবে না। দিন যে গেল! বড়ো পাপী আমি। আমার কী গতি হবে।
ফকির। গুরুপদে মন স্থির করো— শিবোহং।
মাখন। এই পদেই ঠেকল আমার তরী; যম তা হলে ভয়ে কাছে ঘেঁষবে না।
ফকির। তোমার নিষ্ঠা দেখে বড়ো সন্তুষ্ট হলুম।
মাখন। শুধু নিষ্ঠা নয় গুরু, এনেছি কিছু তালের বড়া। তালগাছটা সুদ্ধ উদ্ধার পাক।
ফকির। (ব্যগ্রভাবে আহার) আহা, সুস্বাদ বটে। ভক্তির দান কিনা।
মাখন। সার্থক হল আমার নিবেদন। বাড়ির এঁয়োরা খবর পেলে কী খুশিই হবেন! যাই, ওঁদের সংবাদ পাঠিয়ে দিইগে, ওঁরা আরও কিছু হাতে নিয়ে আসবেন।— প্রভু, গৃহাশ্রমে আর কি ফিরবেন না।
ফকির। আর কেন। গুরু বলেন, বৈরাগ্যং এবং ভয়ং।
মাখন। গৃহী আমি, ডাইনে বাঁয়ে মায়া-মাকড়সানি জড়িয়েছে আপাদমস্তক। ধনদৌলতের সোনার কেল্লাটা কত বড়ো ফাঁকি সেটা খুব করেই বুঝে নিয়েছি। বুঝেছি সেটা নিছক স্বপ্ন। ভগবান আমাকে অকিঞ্চন করে পথে পথে ঘোরাবেন এই তো আমার দিনরাত্রির সাধনা, কিন্তু আর তোর পারি নে, একটা উপায় বাতলিয়ে দাও।
ফকির। আছে উপায়।
মাখন। (পা জড়িয়ে) বলে দাও, বলে দাও, বঞ্চিত কোরো না।
ফকির। দিন-ভোর উপোস ক'রে থেকে—
মাখন। উপোস! সর্বনাশ! সেটা অভ্যেস নেই একেবারেই। আমার দুষ্ট গ্রহ দিনে চারবার করে আহার জুটিয়ে দিয়ে অন্তরটা একেবারে নিরেট করে দিয়েছেন। আর কোনো রাস্তা যদি—
ফকির। আচ্ছা, দুখানা রুটি—
মাখন। আরও একটু দয়া করেন যদি, দুবাটি ক্ষীর!
ফকির। ভালো, তাই হবে।
মাখন। আহা, কী করুণা প্রভুর! তেমন করে পা যদি চেপে থাকতে পারি তা হলে পাঁঠাটাও—
ফকির। না না, ওটা থাক্।