মুক্তির উপায়
যখন পুরুষরা কাজে চলে গেছে—
ওরে ভাই, জানকীরে দিয়ে এস বন—
ওরে রে লক্ষ্মণ, এ কী কুলক্ষণ, বিপদ ঘটেছে বিলক্ষণ।
মা-জননীদের দুই চক্ষু দিয়ে অশ্রুধারা ঝরেছে— দু-চার দিনের সঞ্চয় নিয়ে এসেছি। আমাকে ভালোবাসে সবাই। জ্যাঠাইমা আমার যদি দুটো বিয়ে না দিত তা হলে চাই কি আমার নিজের স্ত্রীও হয়তো আমাকে ভালোবাসতে পারত। বাইরে থেকে বুঝতে পারবে না,কিন্তু আমারও কেমন অল্পেতেই মন গলে যায়। এই দেখো-না, এখন তোমাকে মা-অঞ্জনা বলতে ইচ্ছে করছে।

পুষ্প। সেই ভালো, আমার নাতির সংখ্যা বেড়ে চলেছে, দিদির পদটা বড্ড বেশি ভারি হয়ে উঠল। আচ্ছা, জিগেস করি, তোমার মনটা কী বলছে।

মাখন। তবে মা, কথাটা খুলে বলি। অনেক দিন পরে এ পাড়ার কাছাকাছি আসতেই প্রথম দিনই আমার বিপদ বাধল ফোড়নের গন্ধে। সেদিন আমাদের রান্নাঘরে পাঁঠা চড়েছিল— সত্যি বলি, বড়ো বোয়ের মুখ খারাপ, কিন্তু রান্নায় ওর হাত ভালো। সেদিন বাতাস শুঁকে শুঁকে বাড়ির আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়িয়েছি সারাদিন। তার পর থেকে অর্ধভোজনের টানে এ পাড়া ছাড়া আমার অসাধ্য হল। বারবার মনে পড়ছে, কত দিনের কত গালমন্দ আর কত কাঁটাচচ্চড়ি। একদিন দিব্যি গেলেছিলুম, এ বাড়িতে কোনোদিন আর ঢুকব না। প্রতিজ্ঞা ভেঙেছি কাল।

পুষ্প। কিসে ভাঙালো।

মাখন। তালের বড়ার গন্ধে। দিনটা ছট্‌ফট্ করে কাটালুম। রাত্তিরে যখন সব নিশুতি, বাইরে থেকে ছিট্‌কিনি খুলে ঢুকলুম ঘরে। খুট করে শব্দ হতেই আমার ছোটোটি এক হাতে পিদিম এক হাতে লাঠি নিয়ে ঢুকে পড়ল ঘরে। মুখে মেখে এসেছিলুম কালি, আমি হাঁ করে দাঁত খিঁচিয়ে হাঁউমাউখাঁউ করে উঠতেই পতন ও মূর্ছা। বড়ো বউ একবার উঁকি মেরেই দিল দৌড়। আমি রয়ে বসে পেট ভরে আহার করে ধামাসুদ্ধ বড়া নিয়ে এলুম বেরিয়ে।

পুষ্প। কিছু প্রসাদ রেখে এলে না পতিব্রতাদের জন্যে?

মাখন। অনেকখানি পায়ের ধুলো রেখে এসেছি, আর বড়াগুলো নিয়ে এসেছি দলবলকে খাইয়ে দিতে।

পুষ্প। আচ্ছা, তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করি, সত্যি বলবে?

মাখন। দেখো মা, বিপদে না পড়লে আমি কখনো মিথ্যে কথা কই নে।

পুষ্প। লোকে বলে, তুমি কাশীতে গিয়ে আরও একটা বিয়ে করেছ।

মাখন। তা করেছি।

পুষ্প। পিঠ সুড়্‌সুড়্ করছিল?

মাখন। না মা, দুটো বিয়ে কাকে বলে হাড়ে হাড়ে জেনেছি। ভারি ইচ্ছা হল, একটা বিয়ে কি রকম মরার আগে জেনে নেব।

পুষ্প। জেনে নিয়েছ সেটা?

মাখন। বেশি দিন নয়। ভাগ্যবতী কিনা, পুণ্যফলে মারা গেল সকাল-সকাল, স্বামী বর্তমানেই। ঘোমটা সবে খুলেছে মাত্র। কিন্তু ভালো ক'রে মুখ ফোটবার তখনো সময় হয়নি। বেঁচে থাকলে কপালে কী ছিল বলা যায় না।

পুষ্প। কার কপালে?

মাখন। শক্ত কথা।