মুক্তির উপায়

মাখন। আচ্ছা, তবে থাক্‌, একটা দিন বৈ তো নয়। তা কী করতে হবে বলুন। দেখুন, আমি মুখ্‌খু মানুষ, অনুস্বার-বিসর্গওয়ালা মন্তর মুখ দিয়ে বেরবে না, কী বলতে কী বলব, শেষকালে অপরাধ হবে।

ফকির। ভয় নেই, তোমার জন্যে সহজ করেই দিচ্ছি। গুরুর মূর্তি স্মরণ করে সারারাত জপ করবে, সোনা তোমাকেই দিলুম, তোমাকেই দিলুম, যতক্ষণ না ধ্যানের মধ্যে দেখবে, সোনা আর নেই—কোত্থাও নেই।

মাখন। হবে হবে প্রভু, এই অধমেরও হবে। বলব, সোনা নেই, সোনা নেই; এ হাতে নেই, ও হাতে নেই; ট্যাঁকে নেই, থলিতে নেই; ব্যাঙ্কে নেই, বাক্সোয় নেই। ঠিক সুরে বাজবে মন্ত্র। আচ্ছা, গুরুজি, ওর সঙ্গে একটা অনুস্বার জুড়ে দিলে হয় না? নইলে নিতান্ত বাংলার মতো শোনাচ্ছে। অনুস্বার দিলে জোর পাওয়া যায়— সোনাং নেই, সোনাং নেই, কিছুং নেই, কিছুং নেই।

ফকির। মন্দ শোনাচ্ছে না।

মাখন। আচ্ছা, তবে অনুমতি হোক, পোলাওটা ঠাণ্ডা হয়ে এল!

[ প্রস্থান
           ফকিরের গান
শোন্‌ রে শোন্‌ অবোধ মন—
        শোন্‌    সাধুর উক্তি, কিসে মুক্তি
            সেই সুযুক্তি কর্ গ্রহণ।
ভবের    শুক্তি ভেঙে মুক্তি-মুক্তা কর্ অন্বেষণ
            ওরে ও ভোলা মন!
ষষ্ঠীচরণ ছুটে এসে

ষষ্ঠী। দেখি দেখি, এই তো দাদু আমার— আমার মাখন। (মুখে হাত বুলিয়ে) অমন চাঁদমুখখানা দাড়ি গোঁফ দিয়ে একেবারে চাপা দিয়েছে। একে ভগবান আমার চোখে পরিয়েছে বুড়ো বয়সের ঠুলি, ভালো দেখতেই পাই নে, তার উপর এ কী কাণ্ড করেছিস মাখন!

ফকির। সোহং ব্রহ্ম, সোহং, ব্রহ্ম, সোহং ব্রহ্ম।

ষষ্ঠী। করেছিস কী দাদু, মন্তর প’ড়ে প’ড়ে অমন মিষ্টি গলায় কড়া পাড়িয়ে দিয়েছিস! সুর মোটা হয়ে গেছে!

ফকির। শিবোহং শিবোহং শিবোহং।

বামনদাস বাবুর প্রবেশ

বামনদাস। আরে আরে, আমাদের মাখন নাকি? খাঁটি তো? ও ষষ্ঠীদা, মানতেই হবে যোগবল— নাকের উপর থেকে আঁচিলটা একেবারে সাফ দিয়েছে উড়িয়ে। ভট্‌চায, দেখে যাও হে, নাকের উপর কী মন্তর দেগেছিল গো! একটু চিহ্ন রেখে যায় নি। ষষ্ঠীদা, ঐ নাক নিয়ে কত ঝাড়ফুঁক করেছিলে, একটু টলাতে পার নি। তপিস্যের মাহাত্মি বটে—

ষষ্ঠী। না ভাই, মাহাত্মি ভালো লাগছে না। তোরা যাকে বলতিস গণ্ডারী নাক, সে ছিল ভালো।

নিশিঠাকুর। ওর মুখমণ্ডল যে নিজেকে বেকবুল করছে, তার উপরে আবার মুখে কথা নেই। অমন সব বোলচাল, মুনি হয়ে সব ভুলেছে বুঝি!

ভজহরি। দেখি দেখি মাখ্‌না, মুখটা দেখি। (চিমটি কেটে, চামড়া টেনে) না হে, এ মুখোষ নয়, ধাঁদা লাগিয়ে দিলে।