ভ্রষ্ট লগ্ন

শয়নশিয়রে প্রদীপ নিবেছে সবে,

জাগিয়া উঠেছি ভোরের কোকিলরবে।

অলসচরণে বসি বাতায়নে এসে

নূতন মালিকা পরেছি শিথিল কেশে।

এমন সময়ে অরুণধূসর পথে

তরুণ পথিক দেখা দিল রাজরথে।

সোনার মুকুটে পড়েছে উষার আলো,

মুকুতার মালা গলায় সেজেছে ভালো।

শুধালো কাতরে ‘সে কোথায়! সে কোথায়!’

      ব্যগ্রচরণে আমারি দুয়ারে নামি—

শরমে মরিয়া বলিতে নারিনু হায়,

     ‘নবীন পথিক, সে যে আমি, সেই আমি!’

 

 

গোধূলিবেলায় তখনো জ্বলে নি দীপ,

পরিতেছিলাম কপালে সোনার টিপ—

কনকমুকুর হাতে লয়ে বাতায়নে

বাঁধিতেছিলাম কবরী আপনমনে।

হেনকালে এল সন্ধ্যাধূসর পথে

করুণনয়ন তরুণ পথিক রথে।

ফেনায় ঘর্মে আকুল অশ্বগুলি

বসনে ভূষণে ভরিয়া গিয়াছে ধূলি।

শুধালো কাতরে ‘সে কোথায়! সে কোথায়!’

     ক্লান্ত চরণে আমারি দুয়ারে নামি—

শরমে মরিয়া বলিতে নারিনু হায়,

     ‘শ্রান্ত পথিক, সে যে আমি, সেই আমি!’