সোনার তরী
                   দাদুরী ডাকিছে সারারাতি—
     হেনকালে কী না ঘটে,           এ সময়ে আসে বটে
                   একা ঘরে স্বপনের সাথি।
     মরি মরি স্বপ্নশেষে             পুলকিত রসাবেশে
                 যখন সে জাগিল একাকী,
     দেখিল বিজন ঘরে            দীপ নিবু নিবু করে
                প্রহরী প্রহর গেল হাঁকি।
     বাড়িছে বৃষ্টির বেগ,             থেকে থেকে ডাকে মেঘ,
                   ঝিল্লিরব পৃথিবী ব্যাপিয়া,
      সেই ঘনঘোরা নিশি             স্বপ্নে জাগরণে মিশি
                 না জানি কেমন করে হিয়া।

 

      লয়ে পুঁথি দু-চারিটি             নেড়ে চেড়ে ইটি সিটি
                   এইমতো কাটে দিনরাত।
       তার পরে টানি লই             বিদেশী কাব্যের বই,
                   উলটি পালটি দেখি পাত—
        কোথা রে বর্ষার ছায়া         অন্ধকার মেঘমায়া
                      ঝরঝর ধ্বনি অহরহ,
      কোথায় সে কর্মহীন             একান্তে আপনে-লীন
                     জীবনের নিগূঢ় বিরহ!
       বর্ষার সমান সুরে            অন্তর বাহির পুরে
                  সংগীতের মুষলধারায়,
      পরানের বহুদূর                    কূলে কূলে ভরপুর,
                  বিদেশী কাব্যে সে কোথা হায়!
     তখন সে পুঁথি ফেলি,              দুয়ারে আসন মেলি
                   বসি গিয়ে আপনার মনে,
    কিছু করিবার নাই                 চেয়ে চেয়ে ভাবি তাই
                   দীর্ঘ দিন কাটিবে কেমনে।
    মাথাটি করিয়া নিচু               বসে বসে রচি কিছু
                   বহু যত্নে সারাদিন ধরে—
    ইচ্ছা করে অবিরত               আপনার মনোমত
                   গল্প লিখি একেকটি করে।
   ছোটো প্রাণ, ছোটো ব্যথা,            ছোটো ছোটো দুঃখকথা