সোনার তরী
                    জগতের দু পারে দুজন—
     প্রাণে প্রাণে পড়ে টান,         মাঝে মহা ব্যবধান,
                মনে মনে কল্পনা সৃজন।
     যক্ষবধূ গৃহকোণে                   ফুল নিয়ে দিন গণে
                দেখে শুনে ফিরে আসি চলি।
     বর্ষা আসে ঘন রোলে,          যত্নে টেনে লই কোলে
                গোবিন্দদাসের পদাবলী।
     সুর করে বার বার           পড়ি বর্ষা-অভিসার—
                 অন্ধকার যমুনার তীর,
     নিশীথে নবীনা রাধা              নাহি মানে কোনো বাধা,
                 খুঁজিতেছে নিকুঞ্জ-কুটির।
     অনুক্ষণ দর দর                বারি ঝরে ঝর ঝর,
                 তাহে অতি দূরতর বন;
     ঘরে ঘরে রুদ্ধ দ্বার,            সঙ্গে কেহ নাহি আর
                শুধু এক কিশোর মদন।

 

     আষাঢ় হতেছে শেষ,             মিশায়ে মল্লার দেশ
                  রচি 'ভরা বাদরের' সুর।
     খুলিয়া প্রথম পাতা,                গীতগোবিন্দের গাথা
                 গাহি 'মেঘে অম্বর মেদুর'।
      স্তব্ধ রাত্রি দ্বিপ্রহরে              ঝুপ্‌ ঝুপ্‌ বৃষ্টি পড়ে—
                 শুয়ে শুয়ে সুখ-অনিদ্রায়
      ‘রজনী শাঙন ঘন              ঘন দেয়া গরজন’
                সেই গান মনে পড়ে যায়।
   ‘পালঙ্কে শয়ান রঙ্গে             বিগলিত চীর অঙ্গে’
                  মনসুখে নিদ্রায় মগন—
     সেই ছবি জাগে মনে            পুরাতন বৃন্দাবনে
                 রাধিকার নির্জন স্বপন।
     মৃদু মৃদু বহে শ্বাস,              অধরে লাগিছে হাস,
                কেঁপে উঠে মুদিত পলক;
     বাহুতে মাথাটি থুয়ে            একাকিনী আছে শুয়ে,
                গৃহকোণে ম্লান দীপালোক।
     গিরিশিরে মেঘ ডাকে,           বৃষ্টি ঝরে তরুশাখে