প্রায়শ্চিত্ত

মন্ত্রী। মহারাজ, শুনতে পাই, প্রতাপাদিত্য আজকাল আপসোসে সারা হচ্ছেন। এখন কী উপায়ে মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি পাঠাবেন, তাই ভেবে তাঁর আহারনিদ্রা নেই।

রামচন্দ্র। সত্যি নাকি? [ হাস্য ও তাম্রকূট সেবন ]

মন্ত্রী। আমি বললুম, আর মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়ে কাজ নেই। তোমাদের ঘরে মহারাজ বিবাহ করেছেন, এতেই তোমাদের সাত পুরুষ উদ্ধার হয়ে গেছে। তার পরে আবার তোমাদের মেয়েকে ঘরে এনে ঘর নিচু করা, এত পুণ্য এখনও তোমরা কর নি। কেমন হে, ঠাকুর?

রমাই। তার সন্দেহ আছে? মহারাজ, আপনি যে পাঁকে পা দিয়েছেন, সে তো পাঁকের বাবার ভাগ্যি, কিন্তু তাই বলে ঘরে ঢোকবার সময় পা ধুয়ে আসবেন না তো কী।

 

ভৃত্যের প্রবেশ

 

ভৃত্য। মহারাজ, আহার প্রস্তুত।

[ রমাই ও মন্ত্রীর প্রস্থান

রামমোহন মালের প্রবেশ

রামমোহন। ( করজোড়ে) মহারাজ।

রামচন্দ্র। কী রামমোহন?

রামমোহন। মহারাজ, আজ্ঞা দিন আমি মাঠাকরুনকে আনতে যাই।

রামচন্দ্র। সে কি কথা!

রামমোহন। আজ্ঞে হাঁ। অন্তঃপুর অন্ধকার হয়ে আছে, আমি তা দেখতে পারি নে। অন্দরে যাই, মহারাজের ঘরে কাকেও দেখতে পাই নে, আমার যেন প্রাণ কেমন করতে থাকে। আমার মা-লক্ষ্মী ঘরে এসে ঘর আলো করুন দেখে চক্ষু সার্থক করি।

রামচন্দ্র। রামমোহন, তুমি পাগল হয়েছ? সে-মেয়েকে আমি ঘরে আনি?

রামমোহন। ( নেত্র বিস্ফারিত করিয়া) কেন মহারাজ!

রামচন্দ্র। বল কী রামমোহন? প্রতাপাদিত্যের মেয়েকে আমি ঘরে আনব?

রামমোহন। কেন আনবেন না হুজুর? আপনার রানীকে আপনি যদি ঘরে এনে তাঁর সম্মান না রাখেন তাহলে কি আপনার সম্মানই রক্ষা হবে?

রামচন্দ্র। যদি প্রতাপাদিত্য মেয়েকে না দেয়?

রামমোহন। ( বক্ষ ফুলাইয়া) কী বললে মহারাজ? যদি না দেয়? এতবড়ো সাধ্য কার যে দেবে না! আমার মা জননী, আমাদের ঘরের মা-লক্ষ্মী, কার সাধ্য তাঁকে আমাদের কাছ হতে কেড়ে রাখতে পারে। আমার মাকে আমি আনব, তুমিই বা বারণ করবার কে?

[ প্রস্থানোদ্যম

রামচন্দ্র। ( তাড়াতাড়ি) রামমোহন, যেয়ো না, শোনো শোনো। আচ্ছা তুমি আনতে যাচ্ছ যাও— তাতে আপত্তি নেই; কিন্তু