প্রায়শ্চিত্ত

৩। যদি শুধোয় কেন দিবি নে?

ধনঞ্জয়। বলব, ঘরের ছেলেমেয়েকে কাঁদিয়ে যদি তোমাকে টাকা দিই তা হলে আমাদের ঠাকুর কষ্ট পাবে। যে অন্নে প্রাণ বাঁচে সেই অন্নে ঠাকুরের ভোগ হয় ; তিনি যে প্রাণের ঠাকুর। তার বেশি যখন ঘরে থাকে তখন তোমাকে দিই — কিন্তু ঠাকুরকে ফাঁকি দিয়ে তোমাকে খাজনা দিতে পারব না।

৪। বাবা, এ কথা রাজা শুনবে না।

ধনঞ্জয়। তবু শোনাতে হবে। রাজা হয়েছে বলেই কি সে এমন হতভাগা যে ভগবান তাকে সত্য কথা শুনতে দেবেন না? ওরে জোর করে শুনিয়ে আসব।

৫। ও ঠাকুর, তাঁর জোর যে আমাদের চেয়ে বেশি — তাঁরই জিত হবে।

ধনঞ্জয়। দূর বাঁদর, এই বুঝি তোদের বুদ্ধি! যে হারে তার বুঝি জোর নেই! তার জোর যে একেবারে বৈকুন্ঠ পর্যন্ত পৌঁছোয় তা জানিস?

৬। কিন্তু ঠাকুর, আমরা দূরে ছিলুম, লুকিয়ে বাঁচতুম — একেবারে রাজার দরজায় গিয়ে পড়ব, শেষে দায়ে ঠেকলে আর পালাবার পথ থাকবে না।

ধনঞ্জয়। দেখ্‌ পাঁচকড়ি, অমন চাপাচুপি দিয়ে রাখলে ভালো হয় না। যতদূর পর্যন্ত হবার তা হতে দে, নইলে কিছুই শেষ হতে চায় না। যখন চূড়ান্ত হয় তখনই শান্তি হয়।

৭। তোরা অত ভয় করছিস কেন? বাবা যখন আমাদের সঙ্গে যাচ্ছেন উনি আমাদের বাঁচিয়ে আনবেন।

ধনঞ্জয়। তোদের এই বাবা যার ভরসায় চলেছে তার নাম কর্। বেটারা কেবল তোরা বাঁচতেই চাস্‌ — পণ করে বসেছিস যে মরবি নে। কেন, মরতে দোষ কী হয়েছে? যিনি মারেন তাঁর গুণগান করবি নে বুঝি! ওরে সেই গানটা ধর্‌।

গান

বলো ভাই ধন্য হরি।

বাঁচান বাঁচি, মারেন মরি।

ধন্য হরি সুখের নাটে,

ধন্য হরি রাজ্যপাটে।

ধন্য হরি শ্মশান-ঘাটে-

ধন্য হরি, ধন্য হরি।

সুধা দিয়ে মাতান যখন

ধন্য হরি, ধন্য হরি।

ব্যথা দিয়ে কাঁদান যখন

ধন্য হরি, ধন্য হরি।

আত্মজনের কোলে বুকে

ধন্য হরি হাসিমুখে-

ছাই দিয়ে সব ঘরের সুখে

ধন্য হরি, ধন্য হরি।