চিরকুমার-সভা

রসিক। সে আর বলতে।

শ্রীশ। নৃপবালা বুঝি কান্নাকাটি করছেন?

বিপিন। আচ্ছা, নীরবালা তাঁর মাকে কেন একটু ভালো করে বুঝিয়ে বলেন না —

রসিক। ( স্বগত ) ঐ রে, শুরু হল। আমার লেমনেডে কাজ নেই। ( প্রকাশ্যে ) মাপ করবেন, আমায় কিন্তু এখনই উঠতে হচ্ছে।

শ্রীশ। বলেন কী।

বিপিন। সে কি হয়।

রসিক। সেই ছেলেদুটোকে ভুল ঠিকানা দিয়ে আসতে হবে, নইলে —

শ্রীশ। বুঝেছি, তা হলে, এখনই যান।

বিপিন। তা হলে আর দেরি করবেন না।


তৃতীয় দৃশ্য
চন্দ্রবাবুর বাড়ি
নির্মলা বাতায়নতলে আসীন। চন্দ্রবাবুর প্রবেশ

চন্দ্রবাবু। ( স্বগত ) বেচারা নির্মলা বড়ো কঠিন ব্রত গ্রহণ করেছে। আমি দেখছি কদিন ধরে ও চিন্তায় নিমগ্ন হয়ে রয়েছে। স্ত্রীলোক, মনের উপর এতটা ভার কি সহ্য করতে পারবে। ( প্রকাশ্যে ) নির্মল।

নির্মলা। ( চমকিয়া ) কী মামা।

চন্দ্রবাবু। সেই লেখাটা নিয়ে বুঝি ভাবছ? আমার বোধ হয় অধিক না ভেবে মনকে দুই - একদিন বিশ্রাম দিলে লেখার পক্ষে সুবিধা হতে পারে।

নির্মলা। ( লজ্জিত হইয়া ) আমি ঠিক ভাবছিলুম না মামা। আমার এতক্ষণ সেই লেখায় হাত দেওয়া উচিত ছিল, কিন্তু এই কদিন থেকে গরম পড়ে দক্ষিনে হাওয়া দিতে আরম্ভ করেছে, কিছুতেই যেন মন বসাতে পারছি নে — ভারি অন্যায় হচ্ছে, আজ আমি যেমন করে হোক —

চন্দ্রবাবু। না না, জোর করে চেষ্টা কোরো না। আমার বোধ হয় নির্মল, বাড়িতে কেউ সঙ্গিনী নেই, নিতান্ত একলা কাজ করতে তোমার শ্রান্তি বোধ হয়। কাজে দুই - একজনের সঙ্গ এবং সহায়তা না হলে —

নির্মলা। অবলাকান্তবাবু আমাকে কতকটা সাহায্য করবেন বলেছেন — আমি তাঁকে রোগীশুশ্রূষা সম্বন্ধে সেই ইংরেজি বইটা দিয়েছি, তিনি একটা অধ্যায় আজ লিখে পাঠাবেন বলেছেন। বোধ হয় এখনই পাওয়া যাবে, তাই আমি অপেক্ষা করে বসে আছি।

চন্দ্রবাবু। ঐ ছেলেটি বড়ো ভালো —

নির্মলা। খুব ভালো — চমৎ কার —

চন্দ্রবাবু। এমন অধ্যবসায়, এমন কার্যতৎপরতা —

নির্মলা। আর, এমন সুন্দর নম্রস্বভাব —