চিরকুমার-সভা

রসিক। অন্তত এই বুড়োর দিকটা রক্ষা হয়েছে — দুটো অর্বাচীনের সঙ্গে মিশে আমাকে রাত্রে রাস্তায় দাঁড়িয়ে শ্লোক আওড়াতে হবে না।

শৈলবালা। মুখুজ্জেমশায়, তুমি না হলে রসিকদাদাকে কেউ শাসন করতে পারে না — উনি আমাদের কথা মানেন না।

অক্ষয়। যে বয়সে তোমাদের কথা বেদবাক্য বলে মানতেন সে বয়স পেরিয়েছে কিনা। তাই লোকটা বিদ্রোহ করতে সাহস করছে। আচ্ছা, আমি ঠিক করে দিচ্ছি। চলো তো রসিকদা, আমার বাইরের ঘরটাতে বসে তামাক নিয়ে পড়া যাক।


দ্বিতীয় দৃশ্য
বিপিনের বাসা
বিপিন ও গুরুদাস
তানপুরা হস্তে বিপিন অত্যন্ত বেসুরো গলায় সা রে গা মা সাধিতেছেন

বিপিন। ভাই গুরুদাস, তুমি তো ওস্তাদ মানুষ, আমার এই উপকারটি তোমার করে দিতেই হবে। এই খাতার সব গানগুলিই তোমাকে সুর বসিয়ে দিতে হবে। যেটা গাইলে ওটা খাসা হয়েছে। যদি কষ্ট নাহয় তো আর একবার — আগে ঐ গানের কথা দেখেই মজে গিয়েছিলুম, এখন দেখি কথাটি মানস-সরোবরের পদ্ম, আর তার উপরে গানটি বসেছে যেন বীণাপাণি স্বয়ং। ভাই আর - একবার —

গুরুদাস। —

গান

তোমায় চেয়ে আছি বসে পথের ধারে সুন্দর হে।

জমল ধুলা প্রাণের বীণার তারে তারে সুন্দর হে।

নাই যে কুসুম, মালা গাঁথব কিসে।     কান্নারই গান বীণায় এনেছি সে,

দূর হতে তাই শুনতে পাবে অন্ধকারে সুন্দর হে।

দিনের পরে দিন কেটে যায় সুন্দর হে।

মরে হৃদয় কোন্‌ পিপাসায় সুন্দর হে।

শূন্য ঘাটে আমি কী যে করি,     রঙিন পালে কবে আসবে তরী —

পাড়ি দেব কবে সুধারসের পারাবারে সুন্দর হে।

 

ভৃত্যের প্রবেশ

 

ভৃত্য। একটি বাবু এসেছেন।

বিপিন। বাবু? কিরকম বাবু রে।

ভৃত্য। বুড়ো লোকটি।