চিরকুমার-সভা

শ্রীশ। ও, তা বটে।

বিপিন। হাঁ, সে কথা ভুলেছিলেম।

শ্রীশ। তা হলে তো আমাদের দুজনকেই যেতে হয়। কিন্তু —

রসিক। সে দুটোকে ভুল রাস্তায় চালান করে দিতে আমিই পারব। কিন্তু, আপনারা —

বিপিন। আমাদের জন্যে ভাববেন না রসিকবাবু।

শ্রীশ। আমরা সব - তাতেই প্রস্তুত আছি।

রসিক। আপনারা মহৎ লোক, এরকম ত্যাগস্বীকার —

শ্রীশ। বিলক্ষণ! এর মধ্যে ত্যাগস্বীকার কিছুই নেই।

বিপিন। এ তো আনন্দের কথা।

রসিক। না না, তবু তো মনে আশঙ্কা হতে পারে যে, কী জানি নিজের ফাঁদে যদি নিজেই পড়তে হয়।

শ্রীশ। কিছু না মশায়, কোনো আশঙ্কায় ডরাই নে।

বিপিন। আমাদের যাই ঘটুক তাতেই আমরা সুখী হব।

রসিক। এ তো আপনাদের মহত্ত্বের কথা, কিন্তু আমার কর্তব্য আপনাদের রক্ষা করা। তা, আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি— এই শুক্রবারের দিনটা আপনারা কোনোমতে উদ্ধার করে দিন, তার পরে কখনো আপনাদের আর বিরক্ত করব না।

শ্রীশ। আমাদের বিরক্ত করবেন না এই কথা শুনে দুঃখিত হলেম রসিকবাবু।

রসিক। আচ্ছা, করব।

বিপিন। আমরা কি নিজের স্বাধীনতার জন্যেই কেবল ব্যস্ত। আমাদের এতই স্বার্থপর মনে করেন?

রসিক। মাপ করবেন — আমার ভুল ধারণা ছিল।

শ্রীশ। আপনি যাই বলুন, ফস্‌ করে ভালো পাত্র পাওয়া বড়ো শক্ত।

রসিক। সেইজন্যেই তো এত দিন অপেক্ষা করে শেষে এই বিপদ। বিবাহের প্রসঙ্গমাত্রই আপনাদের কাছে অপ্রিয়, তবু দেখুন আপনাদের সুদ্ধ —

বিপিন। সেজন্যে কিছু সংকোচ করবেন না —

শ্রীশ। আপনি যে আর - কারো কাছে না গিয়ে আমাদের কাছে এসেছেন, সেজন্যে অন্তরের সঙ্গে ধন্যবাদ দিচ্ছি।

রসিক। আমি আর আপনাদের ধন্যবাদ দেব না। সেই কন্যা দুটির চিরজীবনের ধন্যবাদ আপনাদের পুরস্কৃত করবে।

বিপিন। ওরে, পাখাটা টান্‌।

শ্রীশ। রসিকবাবুর জন্যে জলখাবার আনাবে বলেছিলে —

বিপিন। সে এল বলে। ততক্ষণ এক গ্লাস বরফ - দেওয়া জল খান —

শ্রীশ। জল কেন, লেমনেড আনিয়ে দাও - না। ( পকেট হইতে টিনের বাক্স বাহির করিয়া ) এই নিন রসিকবাবু, পান খান।

বিপিন। ওদিকে হাওয়া পাচ্ছেন? এই তাকিয়াটি নিন - না।

শ্রীশ। আচ্ছা রসিকবাবু, নৃপবালা বুঝি খুব বিষণ্ন হয়ে পড়েছেন —

বিপিন। নীরবালাও অবশ্য খুব —