চিরকুমার-সভা

রসিকের প্রবেশ

 

বিপিন। একি। এ তো বনমালী নয়, এ যে রসিকবাবু।

রসিক। আজ্ঞে হাঁ — আপনাদের আশ্চর্য চেনবার শক্তি — আমি বনমালী নই। ‘ধীরেসমীরে যমুনাতীরে বসতি বনে বনমালী — ‘

শ্রীশ। না রসিকবাবু, ও - সব নয়, রসালাপ আমরা বন্ধ করে দিয়েছি।

রসিক। আঃ, বাঁচিয়েছেন।

শ্রীশ। অন্য সকল - প্রকার আলোচনা পরিত্যাগ করে এখন থেকে আমরা একান্তমনে কুমার - সভার কাজে লাগব।

রসিক। আমারও সেই ইচ্ছে।

শ্রীশ। বনমালী বলে একজন বুড়ো, কুমোরটুলির নীলমাধব চৌধুরীর দুই কন্যার সঙ্গে আমাদের বিবাহের প্রস্তাব নিয়ে উপস্থিত হয়েছিল, আমরা তাকে সংক্ষেপে বিদায় করে দিয়েছি — এ - সকল প্রসঙ্গও আমাদের কাছে অসংগত বোধ হয়।

রসিক। আমার কাছেও ঠিক তাই। বনমালী যদি দুই বা ততোধিক কন্যার বিবাহের প্রস্তাব নিয়ে আমার কাছে উপস্থিত হতেন তবে বোধ হয় তাঁকে নিষ্ফল হয়ে ফিরতে হত।

বিপিন। রসিকবাবু, কিছু জলযোগ করে যেতে হবে।

রসিক। না মশায়, আজ থাক্‌। আপনাদের সঙ্গে দুটো - একটা বিশেষ কথা ছিল, কিন্তু কঠিন প্রতিজ্ঞার কথা শুনে সাহস হচ্ছে না।

বিপিন। ( সাগ্রহে ) না না, তাই ব'লে কথা থাকলে বলবেন না কেন।

শ্রীশ। আমাদের যতটা ঠাওরাচ্ছেন ততটা ভয়ংকর নই। কথাটা কি বিশেষ করে আমার সঙ্গে।

বিপিন। না, সেদিন যে রসিকবাবু বলছিলেন আমারই সঙ্গে ওঁর দুটো - একটা আলোচনার বিষয় আছে।

রসিক। কাজ নেই, থাক্‌।

শ্রীশ। বলেন তো আজ রাত্রে গোলদিঘির ধারে —

রসিক। না শ্রীশবাবু, মাপ করবেন।

শ্রীশ। বিপিন ভাই, তুমি একটু ও ঘরে যাও - না, বোধ হয় তোমার সাক্ষাতে রসিকবাবু —

রসিক। না না, দরকার কী —

বিপিন। তার চেয়ে রসিকবাবু, তেতালার ঘরে চলুন — শ্রীশ এখানে একটু অপেক্ষা করবেন এখন।

রসিক। না, আপনারা দুজনেই বসুন, আমি উঠি।

বিপিন। সে কি হয়। কিছু খেয়ে যেতে হবে।

শ্রীশ। না, আপনাকে কিছুতেই ছাড়ছি নে। সে হবে না।

রসিক। তবে কথাটা বলি। নৃপবালা নীরবালার কথা তো পূর্বেই আপনারা শুনেছেন —

শ্রীশ। শুনেছি বৈকি — তা নৃপবালার সম্বন্ধে যদি কিছু —

বিপিন। নীরবালার কোনো বিশেষ সংবাদ —

রসিক। তাঁদের দুজনের সম্বন্ধেই বিশেষ চিন্তার কারণ হয়ে পড়েছে।