চিরকুমার-সভা

বিপিন। জ্যোৎস্নায় রাস্তায় বেড়াতে বেড়াতে দিব্যি আরামে — কী বলেন।

রসিক। খুব আরাম। ( স্বগত ) কিন্তু বেয়ারামটা তার পরে।

অন্যত্র

শৈলবালা। ( নির্মলার প্রতি ) তা বেশ, আপনি যদি ইচ্ছা করেন আমিও ঐ বিষয়টার আলোচনা করে দেখব। ডাক্তারি আমি অল্প অল্প চর্চা করেছি — বেশি নয় — কিন্তু আমি যোগদান করলে আপনার যদি উৎসাহ হয় আমি প্রস্তুত আছি।

পূর্ণ। ( নিকটে আসিয়া ) সেদিন বেলুন উড়েছিল, আপনি কি ছাদের উপর থেকে দেখতে পেয়েছিলেন।

নির্মলা। বেলুন?

পূর্ণ। হাঁ, ঐ বেলুন ( সকলে নিরুত্তর ) — রসিকবাবু বলছিলেন আপনি বোধ হয় দেখে থাকবেন, আমাকে মাপ করবেন— আপনাদের আলোচনায় আমি ভঙ্গ দিলুম — আমি অত্যন্ত হতভাগ্য।


পঞ্চম অঙ্ক
প্রথম দৃশ্য
অক্ষয়ের বাসা
অক্ষয় ও পুরবালা

অক্ষয়। দেবী, যদি অভয় দাও তো একটি প্রশ্ন আছে।

পুরবালা। কী শুনি।

অক্ষয়। শ্রীঅঙ্গে কৃশতার তো কোনো লক্ষণ দেখছি নে!

পুরবালা। শ্রীঅঙ্গ তো কৃশ হবার জন্যে পশ্চিমে বেড়াতে যায় নি।

অক্ষয়। তবে কি বিরহবেদনা বলে জিনিসটা মহাকবি কালিদাসের সঙ্গে সহমরণে মরেছে।

পুরবালা। তার প্রমাণ তুমি। তোমারও তো স্বাস্থ্যের বিশেষ ব্যাঘাত হয় নি দেখছি।

অক্ষয়। হতে দিল কই। তোমার তিন ভগ্নী মিলে অহরহ আমার কৃশতা নিবারণ করে রেখেছিল — বিরহ যে কাকে বলে সেটা আর কোনোমতেই বুঝতে দিলে না। —

গান

বিরহে মরিব ব'লে ছিল মনে পণ —

কে তোরা বাহুতে বাঁধি করিলি বারণ।

ভেবেছিনু অশ্রুজলে       ডুবিব অকূল - তলে

কাহার সোনার তরী করিল তারণ।

— প্রিয়ে, কাশীধামে বুঝি পঞ্চশর ত্রিলোচনের ভয়ে এগোতে পারেন না।

পুরবালা। তা হতে পারে, কিন্তু কলকাতায় তো তাঁর যাতায়াত আছে।

অক্ষয়। তা আছে — কোম্পানির শাসন তিনি মানেন না, আমি তার প্রমাণ পেয়েছি।