চিরকুমার-সভা
যেত, আর ব্যাঙটা যেত শুকিয়ে সে কিরকম হত। এক সময় একটা সংকল্প করেছিলেম বলেই যে সে সংকল্পের খাতিরে নিজেকে শুকিয়ে মারতে হবে আমি তো তার মানে বুঝি নে।

শ্রীশ। আমি বুঝি। অনেক সংকল্প আছে যার কাছে নিজেকে শুকিয়ে মারাও শ্রেয়। অফলা গাছের মতো আমাদের ডালে পালায় প্রতিদিন যেন অতিরিক্ত-পরিমাণ রসসঞ্চার হচ্ছে এবং সফলতার আশা প্রতিদিন যেন দূর হয়ে যাচ্ছে। আমি ভুল করেছিলুম ভাই বিপিন — সব বড়ো কাজেই তপস্যা চাই, নিজেকে নানা ভোগ থেকে বঞ্চিত না করলে, নানা দিক থেকে প্রত্যাহার করে না আনতে পারলে, চিত্তকে কোনো মহৎকাজে সম্পূর্ণভাবে নিযুক্ত করা যায় না। এবার থেকে রসচর্চা একেবারে পরিত্যাগ করে কঠিন কাজে হাত দেব, এইরকম প্রতিজ্ঞা করেছি।

বিপিন। তোমার কথা মানি। কিন্তু, সব তৃণেই তো ধান ফলে না — শুকোতে গেলে কেবল নাহক শুকিয়ে মরাই হবে, ফল ফলবে না। কিছুদিন থেকে আমার মনে হচ্ছে আমরা যে সংকল্প গ্রহণ করেছি সে সংকল্প আমাদের দ্বারা সফল হবে না — অতএব আমাদের স্বভাবসাধ্য অন্য কোনোরকম পথ অবলম্বন করাই শ্রেয়।

শ্রীশ। এ কোনো কাজের কথা নয়। বিপিন তোমার তম্বুরা ফেলো —

বিপিন। আচ্ছা, ফেললুম, তাতে পৃথিবীর কোনো ক্ষতি হবে না।

শ্রীশ। চন্দ্রবাবুর বাসায় আমাদের সভা তুলে নিয়ে যাওয়া যাক —

বিপিন। উত্তম কথা।

শ্রীশ। আমরা দুজনে মিলে রসিকবাবুকে একটু সংযত করে রাখব।

বিপিন। তিনি একলা আমাদের দুজনকে অসংযত করে না তোলেন।

গুরুদাস। সংযমচর্চা যদি আরম্ভ করেন তা হলে আমাকে আর দরকার নেই।

বিপিন। দরকার আরো বেশি। রৌদ্র যত প্রখর হবে, জলের প্রয়োজন ততই বাড়বে। এই দুঃসময়ে তুমি আমাকে ত্যাগ কোরো না — সকাল - সন্ধ্যায় যেন দর্শন পাই। সেই গানটা যদি এর মধ্যে তৈরি হয়ে যায় তো আজ সন্ধেবেলায় — কী বল?

গুরুদাস। আচ্ছা, তাই হবে।

[ প্রস্থান

ভৃত্যের প্রবেশ

ভৃত্য। একটি বুড়ো বাবু এসেছেন।

বিপিন। বুড়ো বাবু? জ্বালালে দেখছি। বনমালী আবার এসেছে।

শ্রীশ। বনমালী? সে যে এই খানিকক্ষণ হল আমার কাছেও এসেছিল।

বিপিন। ওরে, বুড়োকে বিদায় করে দে।

শ্রীশ। তুমি বিদায় করলে আবার আমার ঘাড়ের উপর গিয়ে পড়বে। তার চেয়ে ডেকে আনুক, আমরা

দুজনে মিলে বিদায় করে দিই। ( ভৃত্যের প্রতি ) বুড়োকে নিয়ে আয়।

[ ভৃত্যের প্রস্থান