চিরকুমার-সভা

অক্ষয়। তা হলে ওদের রুচির প্রশংসা করব।

পুরবালা। পছন্দ আবার না করবে কী? তোদের সব বাড়াবাড়ি, স্বয়ম্বরার দিন গেছে। মেয়েদের পছন্দ করবার দরকার হয় না। স্বামী হলেই তাকে ভালোবাসতে পারে।

অক্ষয়। নইলে তোমার বর্তমান ভগ্নীপতির কী দুর্দশাই হত শৈল!

জগত্তারিণীর প্রবেশ

 

জগত্তারিণী। বাবা অক্ষয়, ছেলে দুটিকে তা হলে তো খবর দিতে হয়। তারা তো আমাদের বাড়ির ঠিকানা জানে না।

অক্ষয়। বেশ তো মা, রসিকদাদাকে পাঠিয়ে দেওয়া যাক।

জগত্তারিণী। পোড়া কপাল। তোমার রসিকদাদার যেরকম বুদ্ধি। তিনি কাকে আনতে কাকে আনবেন ঠিক নেই।

পুরবালা। তা মা, তুমি কিছু ভেবো না। ছেলে দুটিকে আনবার ব্যবস্থা করে দেব।

জগত্তারিণী। মা পুরী, তুই একটু মনযোগ না করলে হবে না। আজকালকার ছেলে, তাদের সঙ্গে কিরকম ব্যাভার করতে হয় না - হয় আমি কিছুই বুঝি নে।

অক্ষয়। ( জনান্তিকে ) পুরীর হাতযশ আছে। পুরী তাঁর মার জন্যে যে জামাইটি জুটিয়েছেন, পসার খুব বেড়ে গেছে। আজকালকার ছেলে কী করে বশ করতে হয় সে বিদ্যে —

পুরবালা। ( জনান্তিকে ) মশায় বুঝি আজকালকার ছেলে।

জগত্তারিণী। মা, তোমরা পরামর্শ করো। কায়েৎদিদি এসে বসে আছেন, আমি তাঁকে বিদায় করে আসি।

শৈলবালা। মা, তুমি একটু বিবেচনা করে দেখো, ছেলে দুটিকে এখনো তোমরা কেউ দেখ নি, হঠাৎ —

জগত্তারিণী। বিবেচনা করতে করতে আমার জন্ম শেষ হয়ে এল, আর বিবেচনা করতে পারি নে —

অক্ষয়। বিবেচনা সময়মত এর পর করলেই হবে, এখন কাজটা আগে হয়ে যাক।

জগত্তারিণী। বলো তো বাবা, শৈলকে বুঝিয়ে বলো তো।

[ প্রস্থান

পুরবালা। মিথ্যে তুই ভাবছিস শৈল — মা যখন মনস্থির করেছেন ওঁকে আর কেউ টলাতে পারবে না। প্রজাপতির নির্বন্ধ আমি মানি ভাই। যার সঙ্গে যার হবার, হাজার বিবেচনা করে মলেও সে হবেই।

অক্ষয়। সে তো ঠিক কথা — নইলে যার সঙ্গে যার হয়ে থাকে তার সঙ্গে না হয়ে আর - একজনের সঙ্গে হত।

পুরবালা। কী যে তর্ক কর তোমার অর্ধেক কথা বোঝাই যায় না।

অক্ষয়। তার কারণ আমি নির্বোধ।

পুরবালা। যাও এখন স্নান করতে যাও, মাথা ঠাণ্ডা করে এসো গে।

[ প্রস্থান

রসিকের প্রবেশ

শৈলবালা। রসিকদাদা শুনেছ তো সব? মুশকিলে পড়া গেছে।

রসিক। মুশকিল কিসের। কুমার - সভারও কৌমার্য রয়ে গেল, নৃপ - নীরুও পার পেলে, সব দিক রক্ষা হল।

শৈলবালা। কোনো দিক রক্ষা হয় নি।