চিরকুমার-সভা

শ্রীশ। না, আমার রুমাল বন্ধক রইল, ওখানা খালাস না করে যাচ্ছি নে।

[ প্রস্থান

রসিক। ভাই শৈল, কুমারসভার সভ্যগুলিকে যেরকম ভয়ংকর কুমার ঠাউরেছিলুম তার কিছুই নয়। এদের তপস্যা ভঙ্গ করতে মেনকা রম্ভা মদন বসন্ত কারো দরকার হয় না, এই বুড়ো রসিকই পারে।

শৈলবালা। তাই তো দেখছি।

রসিক। আসল কথাটা কী জান? যিনি দার্জিলিঙে থাকেন তিনি ম্যালেরিয়ার দেশে পা বাড়াবামাত্রই রোগে চেপে ধরে। এঁরা এতকাল চন্দ্রবাবুর বাসায় বড্ড নীরোগ জায়গায় ছিলেন, এই বাড়িটি যে রোগের বীজে ভরা। এখানকার রুমালে বইয়ে চৌকিতে টেবিলে যেখানে স্পর্শ করছেন সেইখান থেকেই একেবারে নাকে মুখে রোগ ঢুকছে — আহা, শ্রীশবাবুটি গেল।

শৈলবালা। রসিকদাদা, তোমার বুঝি রোগের বীজ অভ্যেস হয়ে গেছে।

রসিক। আমার কথা ছেড়ে দাও। আমার পিলে যকৃৎ যা - কিছু হবার তা হয়ে গেছে।

 

নীরবালার প্রবেশ

 

নীরবালা। দিদি, আমরা পাশের ঘরেই ছিলুম।

রসিক। জেলেরা জাল টানাটানি করে মরছে, আর চিল বসে আছে ছোঁ মারবার জন্যে।

নীরবালা। সেজদিদির রুমালখানা নিয়ে শ্রীশবাবু কী কাণ্ডটাই করলে। সেজদিদি তো লজ্জায় লাল হয়ে পালিয়ে গেছে। আমি এমনি বোকা ভুলেও কিছু ফেলে যাই নি। বারোখানা রুমাল এনেছি, ভাবছি এবার ঘরের মধ্যে রুমালের হরির লুঠ দিয়ে যাব।

শৈলবালা। তোর হাতে ও কিসের খাতা নীর।

নীরবালা। যে গানগুলো আমার পছন্দ হয় ওতে লিখে রাখি দিদি।

রসিক। ছোড়্‌দিদি, আজকাল তোর কিরকম পারমার্থিক গান পছন্দ হচ্ছে তার এক - আধটা নমুনা দেখতে পারি কি।

নীরবালা। —

দিন গেল রে, ডাক দিয়ে নে পারের খেয়া —

চুকিয়ে হিসেব মিটিয়ে দে তোর দেয়া - নেয়া।

রসিক। দিদি ভারি ব্যস্ত যে। পার করবার নেয়ে ডেকে দিচ্ছি ভাই। যা দেবে যা নেবে সেটা মোকাবিলায় ঠিক করে নিয়ো।

নীরবালা। —

গান

 

জ্বলে নি আলো অন্ধকারে,

দাও না সাড়া কি তাই বারে বারে।

তোমার বাঁশি আমার বাজে বুকে

কঠিন দুখে, গভীর সুখে —

যে জানে না পথ কাঁদাও তারে।