পরিত্রাণ

তার আগে তার পাষাণ-হিয়া গলবে করুণরসে,

সে কি    অমনি হবে।

আমাকে যে কাঁদাবে তার ভাগ্যে আছে কাঁদন,

সে কি    অমনি হবে।

দ্বিতীয়। বাবাঠাকুর, তোমার গায়ে যদি রাজা হাত দেন, তা হলে কিন্তু আমরা সইতে পারব না।

ধনঞ্জয়। আমার এই গা যাঁর তিনি যদি সইতে পারেন বাবা, তবে তোমাদেরও সইবে। যেদিন থেকে জন্মেছি আমার এই গায়ে তিনি কত দুঃখই সইলেন — কত মার খেলেন, কত ধুলো মাখলেন — হায় হায়-

গান

    কে বলেছে তোমায় বঁধু, এত দুঃখ সইতে।

    আপনি কেন এলে বঁধু, আমার বোঝা বইতে।

প্রাণের বন্ধু, বুকের বন্ধু,

সুখের বন্ধু, দুখের বন্ধু,

তোমায়     দেব না দুখ, পাব না দুখ,

    হেরব তোমার প্রসন্ন মুখ,

আমি সুখে দুঃখে পারব বন্ধু চিরানন্দে রইতে —

    তোমার সঙ্গে বিনা কথায় মনের কথা কইতে।

তৃতীয়। বাবা, আমরা রাজাকে গিয়ে কী বলব।

ধনঞ্জয়। বলব, আমরা খাজনা দেব না।

তৃতীয়। যদি শুধোয়, কেন দিবি নে?

ধনঞ্জয়। বলব, ঘরের ছেলেমেয়েকে কাঁদিয়ে যদি তোমাকে টাকা দিই তা হলে আমাদের ঠাকুর কষ্ট পাবে। যে অন্নে প্রাণ বাঁচে সেই অন্নে ঠাকুরের ভোগ হয় ; তিনি যে প্রাণের ঠাকুর। তার বেশি যখন ঘরে থাকে তখন তোমাকে দিই- কিন্তু ঠাকুরকে ফাঁকি দিয়ে তোমাকে খাজনা দিতে পারব না।

চতুর্থ। বাবা, এ কথা রাজা শুনবে না।

ধনঞ্জয়। তবু শোনাতে হবে। রাজা হয়েছে ব'লেই কি সে এমন হতভাগা যে ভগবান তাকে সত্য কথা শুনতে দেবেন না। ওরে, জোর করে শুনিয়ে আসব।

পঞ্চম। ও ঠাকুর, তাঁর জোর যে আমাদের চেয়ে বেশি- তাঁরই জিত হবে।

ধনঞ্জয়। দূর বাঁদর, এই বুঝি তোদের বুদ্ধি! যে হারে তার বুঝি জোর নেই! তার জোর যে একেবারে বৈকুণ্ঠ পর্যন্ত পৌঁছয় তা জানিস!

ষষ্ঠ। কিন্তু ঠাকুর, আমরা দূরে ছিলুম, লুকিয়ে বাঁচতুম- একেবারে রাজার দরজায় গিয়ে পড়ব, শেষে দায়ে ঠেকলে আর পালাবার পথ থাকবে না।

ধনঞ্জয়। দেখ্‌ পাঁচকড়ি, অমন চাপাচুপি দিয়ে রাখলে ভালো হয় না। যতদূর পর্যন্ত হবার তা হতে দে, নইলে কিছুই শেষ হতে চায় না! যখন চূড়ান্ত হয় তখনই শান্তি হয়।