পরিত্রাণ

উদয়। আচ্ছা, শোন্‌, আমি বলি- তোরা যদি দেরি না করে এখনই দেশে চলে যাস, তা হলে আমি মহারাজের কাছে নিজে মাধবপুরে যাবার দরবার করব।

প্রথম। সঙ্গে আমাদের ঠাকুরকেও নিয়ে যাবে?

উদয়। চেষ্টা করব। কিন্তু, আর দেরি না। এই মুহূর্তে তোরা এখান থেকে বিদায় হ।

প্রজারা। আচ্ছা, আমরা বিদায় হলুম। জয় হোক। তোমার জয় হোক।


তৃতীয় অঙ্ক
প্রথম দৃশ্য
মন্ত্রী ও প্রতাপাদিত্য

মন্ত্রী। যুবরাজ কারাদণ্ড তো এতদিন ভোগ করলেন, এখন ছেড়ে দিন।

প্রতাপ। কারাদণ্ড দেবার কারণ ঘটেছিল, ছেড়ে দেবার তো কারণ ঘটে নি।

মন্ত্রী। কেবল সন্দেহমাত্রে ওঁকে শাস্তি দিয়েছেন। প্রমাণ তো পান নি।

প্রতাপ। মাধবপুরের প্রজারা দরখাস্ত নিয়ে দিল্লিতে চলেছিল, হাতে হাতে ধরা পড়েছিল, সেও কি তুমি অবিশ্বাস কর।

মন্ত্রী। আজ্ঞে না মহারাজ, অবিশ্বাস করছি নে।

প্রতাপ। ওরা তাতে লিখেছে আমি দিল্লীশ্বরের শত্রু, ওদের ইচ্ছা আমাকে সিংহাসন থেকে নামিয়ে উদয়কে সিংহাসন দেওয়া হয়-এ কথাগুলো তো ঠিক?

মন্ত্রী। আজ্ঞে হাঁ, সে দরখাস্ত তো আমি দেখেছি।

প্রতাপ। এর চেয়ে তুমি আর কী প্রমাণ চাও।

মন্ত্রী। কিন্তু এর মধ্যে আমাদের যুবরাজ আছেন, এ কথা আমি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারি নে।

প্রতাপ। তোমার বিশ্বাস কিংবা তোমার আন্দাজের উপর নির্ভর করে তো আমি রাজকার্য চালাতে পারি নে। যদি বিপদ ঘটে তবে ‘ ঐ যা, মন্ত্রী আমার ভুল বিশ্বাস করেছিল ' বলে তো নিষ্কৃতি পাব না।

মন্ত্রী। কিন্তু ন্যায়বিচার করা রাজত্বের অঙ্গ মহারাজ। যুবরাজকে যে সন্দেহে কারাদণ্ড দিয়েছেন তার যদি কোনো মূল না থাকে তা হলেও রাজকার্যের মঙ্গল হবে না।

প্রতাপ। রাজ্যরক্ষা সহজ ব্যাপার নয় মন্ত্রী। অপরাধ নিশ্চয় প্রমাণ হলে তার পরে দণ্ড দেওয়াই যে রাজার কর্তব্য তা আমি মনে করি নে। যেখানে সন্দেহ করা যায় কিংবা যেখানে ভবিষ্যতেও অপরাধের সম্ভাবনা আছে, সেখানেও রাজা দণ্ড দিতে বাধ্য।

মন্ত্রী। আপনি রাগ করবেন, কিন্তু আমি এ ক্ষেত্রে সন্দেহ কিংবা ভবিষ্যৎ অপরাধের সম্ভাবনা পর্যন্ত কল্পনা করতে পারি নে।

প্রতাপ। মাধবপুরের প্রজারা এখানে এসেছিল কি না?

মন্ত্রী। হাঁ।

প্রতাপ। তারা ওকেই রাজা করতে চেয়েছিল কি না?

মন্ত্রী। হাঁ চেয়েছিল।