চিরকুমার-সভা

বিপিন। নৃপবালা! আমার বিশ্বাস নামটি পুরুষমানুষের নয়। কী বোধ কর।

শ্রীশ। আমারও সেই বিশ্বাস। এ নামটিও অন্যজাতীয় বলে ঠেকছে হে।

আর - একটা বই দেখাইল

 

বিপিন। নীরবালা! এ নামটি কাব্যগ্রন্থে চলে কিন্তু কুমার - সভায় —

শ্রীশ। কুমার - সভাতেও এই নামধারিণীরা যদি চলে আসেন তা হলে দ্বাররোধ করতে পারি এত বড়ো বলবান তো আমাদের মধ্যে কাউকে দেখি নে।

বিপিন। পূর্ণ তো একটি আঘাতেই আহত হয়ে পড়ল, রক্ষা পায় কি না সন্দেহ।

শ্রীশ। কি রকম।

বিপিন। লক্ষ্য করে দেখ নি বুঝি?

শ্রীশ। না না, ও তোমার অনুমান।

বিপিন। হৃদয়টা তো অনুমানেরই জিনিস — না যায় দেখা, না যায় ধরা।

শ্রীশ। পূর্ণর অসুখটাও তা হলে বৈদ্যশাস্ত্রের অন্তর্গত নয়?

বিপিন। না, এ - সকল ব্যাধি সম্বন্ধে মেডিকাল কলেজে কোনো লেক্‌চার চলে না।

শ্রীশ। এ বাড়ির দরজায় ঢুকতেই রসিক চক্রবর্তী বলে যে বৃদ্ধ যুবকটির সঙ্গে দেখা হল তাঁকে চিরকুমার - সভার দ্বারীর উপযুক্ত বলে বোধ হল না।

বিপিন। মনে হল শিবের তপোবন আগলাবার জন্য স্বয়ং পঞ্চশর নন্দীর ছদ্মবেশে এসেছেন, লোকটাকে বিশ্বাসযোগ্য ঠেকছে না।

 

চন্দ্রের প্রবেশ

 

চন্দ্রবাবু। আজকের তর্কবিতর্কের উত্তেজনায় পূর্ণবাবুর হঠাৎ শরীর খারাপ হল দেখে, আমি তাঁকে তাঁর বাড়ি পৌঁছে দেওয়া উচিত বোধ করলুম।

বিপিন। পূর্ণবাবুর যেরকম দুর্বল অবস্থা দেখছি পূর্ব হতেই তাঁর বিশেষ সাবধান হওয়া উচিত ছিল।

চন্দ্রবাবু। পূর্ণবাবুকে তো বিশেষ অসাবধান বলে বোধ হয় না।

 

অক্ষয় ও রসিকের প্রবেশ

 

অক্ষয়। মাপ করবেন। এই নবীন সভ্যটিকে আপনাদের হাতে সমর্পণ করে দিয়েই আমি চলে যাচ্ছি।

রসিক। ( হাসিয়া ) আমার নবীনতা বাইরে থেকে বিশেষ প্রত্যক্ষগোচর নয় —

অক্ষয়। অত্যন্ত বিনয়বশত সেটা বাহ্য প্রাচীনতা দিয়ে ঢেকে রেখেছেন — ক্রমশ পরিচয় পাবেন। ইনিই হচ্ছেন সার্থকনামা শ্রীরসিক চক্রবর্তী।