পরিত্রাণ

উদয়। সত্যি নাকি! তোমার ঘরে রাজপুত্র আসা যাওয়া করেন? তিনি কে শুনি? এ খবরটা জানতুম না!

সুরমা। রামচন্দ্র যেমন ভুলেছিলেন তিনি অবতার, তোমারও সেই দশা। কিন্তু ভক্তকে ভোলাতে পারবে না!

উদয়। রাজপুত্র! রাজার ঘরে কোনো জন্মে পুত্র জন্মাবে না, বিধাতার এই অভিশাপ।

সুরমা। সে কী কথা?

উদয়। রাজার ঘরে উত্তরাধিকারীই জন্মায়, পুত্র জন্মায় না।

সুরমা। এ তুমি মনের ক্ষোভে বলছ।

উদয়। কথাটা কি নূতন যে ক্ষোভ হবে? যখন এতটুকু ছিলুম তখন থেকে মহারাজ এইটেই দেখছেন যে, আমি তাঁর রাজ্যভার বইবার যোগ্য কি না? কেবলই পরীক্ষা, স্নেহ নেই।

সুরমা। প্রিয়তম, দরকার কী স্নেহের। খুব কঠোর পরীক্ষাতেও তোমার জিত হবে। তোমার মতো রাজার ছেলে কোন্‌ রাজা পেয়েছে?

উদয়। বল কী? পরীক্ষক তোমার পরামর্শ নিয়ে বিচার করবেন না, সেটা বেশ বুঝতে পারছি।

সুরমা। কারও পরামর্শ নিয়ে বিচার করতে হবে না- আগুনের পরীক্ষাতেও সীতার চুল পোড়ে নি! তুমি রাজ্যভার বহনের উপযুক্ত নও, এ কথা বললেই হল? এত বড়ো অবিচার কি জগতে কখনো টিকতে পারে?

উদয়। রাজ্যভারটা নাই বা ঘাড়ের উপর পড়ল, তাতেই বা দুঃখ কিসের?

সুরমা। না, না, ও কথা তোমার মুখে আমার সহ্য হয় না। ভগবান তোমাকে রাজার ছেলে করে পাঠিয়েছেন, সে কথা বুঝি অমন করে উড়িয়ে দিতে আছে! নাহয় দুঃখই পেতে হবে- তা বলে-

উদয়। আমি দুঃখের পরোয়া রাখি নে। তুমি আমার ঘরে এসেছ, তোমাকে সুখী করতে পারি নে, আমার পৌরুষে সেই ধিক্‌কার!

সুরমা। যে সুখ দিয়েছ তাই যেন জন্মজন্মান্তরে পাই।

উদয়। সুখ যদি পেয়ে থাক তো নিজের গুণে, আমার শক্তিতে নয়। এ ঘরে আমার আদর নেই বলে তোমারও যে অপমান ঘটে ; এমন-কি, মাও যে তোমাকে অবজ্ঞা করেন।

সুরমা। আমার সব সম্মান যে তোমার প্রেমে, সে তো কেউ কাড়তে পারে নি।

উদয়। তোমার পিতা শ্রীপুররাজ কিনা যশোরের অধীনতা স্বীকার করেন না- সেই হয়েছে তোমার অপরাধ- মহারাজ তোমার উপর রাগ দেখিয়ে তার শোধ তুলতে চান।

নেপথ্যে। দাদা, দাদা!

উদয়। কেও! বিভা বুঝি? ( দ্বার খুলিয়া) কী বিভা? কী হয়েছে?

বিভা। একটা কাণ্ড হয়ে গেছে। আমি আর বাঁচি নে!

[ মুখ ঢাকিয়া কান্না

সুরমা। ( বিভার গলা জড়াইয়া ধরিয়া) কী হয়েছে ভাই, বল্‌!

বিভা। আর-বার যখন উনি এখানে এসেছিলেন, ঠাট্টার সম্পর্ক ধরে ওঁকে কে ঠাট্টা করেছিল।

সুরমা। সে তো জানি, ওই লক্ষ্মীছাড়া ছোঁড়া মাখনটা ওঁর কাপড়ের সঙ্গে একটা লেজ জুড়ে দিয়েছিল-বলেছিল-উনি রামচন্দ্র নন, রামদাস।