পরিত্রাণ

প্রতাপ। ( নেপথ্যের দিকে চাহিয়া সগর্জনে) খবরদার! ওই পাঠানকে ছাড়িস নে!

[ দ্রুত প্রস্থান

বসন্তরায়ের প্রস্থান। প্রতাপ ও মন্ত্রীর পুনঃপ্রবেশ

 

প্রতাপ। দেখো মন্ত্রী, রাজকার্যে তোমার অত্যন্ত অমনোযোগ দেখা যাচ্ছে।

মন্ত্রী। মহারাজ, এ বিষয়ে আমার কোনো অপরাধ নেই।

প্রতাপ। এ বিষয়ের কথা তোমাকে কে বলছে? আমি বলছি, রাজকার্যে তোমার অত্যন্ত অমনোযোগ দেখছি। সেদিন তোমাকে চিঠি রাখতে দিলেম, হারিয়ে ফেললে! আর-একদিন মনে আছে উমেশ রায়ের কাছে তোমাকে যেতে বলেছিলুম, তুমি লোক দিয়ে কাজ সেরেছিলে।

মন্ত্রী। আজ্ঞে মহারাজ-

প্রতাপ। চুপ করো! দোষ কাটাবার জন্যে মিথ্যে চেষ্টা কোরো না। যা হোক, তোমাকে জানিয়ে রাখছি, রাজকার্যে তুমি কিছুমাত্র মনোযোগ দিচ্ছ না। আর-একটা কথা তোমাকে বলে দিচ্ছি মন্ত্রী, সমস্ত ব্যাপারটার মধ্যে উদয় আছে। এমনি করে সে নিজের চার দিকে জাল জড়াচ্ছে- এর পরে আমাকে দোষ দিতে পারবে না।


তৃতীয় দৃশ্য
উদয়াদিত্যের শয়নকক্ষ
উদয়াদিত্য ও সুরমা

উদয়। যাক্‌, চুকল।

সুরমা। কী চুকল।

উদয়। আমার উপর মাধবপুর শাসনের ভার মহারাজ রেখেছিলেন। টাকায় আট আনা বৃদ্ধি ধরে খাজনা আদায়ের হঠাৎ হুকুম এল। বৃষ্টি নেই, এবারে সেখানে অজন্মা — তাই আমি —

সুরমা। আমি তো তোমাকে আমার গহনাগুলো দিতে চেয়েছিলুম। তার থেকে-

উদয়। তোমার গহনা কেনে এত বড়ো বুকের পাটা এ রাজ্যে আছে? আমি মহারাজকে বললুম, মাধবপুর থেকে বৃদ্ধি খাজনা আমি কোনোমতেই আদায় করতে পারব না। শুনে তিনি মাধবপুর আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছেন। তিনি এখন কেবলই সৈন্য বাড়াচ্ছেন, অস্ত্র কিনছেন, টাকা তাঁর নিতান্ত চাই- তা প্রজা বাঁচুক আর মরুক।

সুরমা। পরগনা তো কেড়ে নিলেন, কিন্তু তুমি চলে এলে প্রজারা যে মরবে!

উদয়। আমি ঠিক করেছি, যে করে হোক তাদের পেটের ভাতটা জোগাব। শুনতে পেলে মহারাজ খুশি হবেন না- নিশ্চয় ভাববেন, আমি তাদের প্রশ্রয় দিচ্ছি। উনি মনে করেন, আমি দয়া দিয়ে নাম কিনি। কিন্তু তোমার ঘরে আজ ফুলের মালার ঘটা কেন?

সুরমা। রাজপুত্রকে রাজসভায় যখন চিনলে না, তখন যে তাকে চিনেছে সে তাকে মালা দিয়ে বরণ করবে।