চিরকুমার-সভা

শৈলবালা। ঐ বুঝি তারা এল। দিদি আর মা ভাঁড়ারে ব্যস্ত আছেন, তাঁদের অবকাশ হবার পূর্বেই ওদের কোনোমতে বিদায় করে দিয়ো।

অক্ষয়। কী বকশিশ মিলবে।

শৈলবালা। আমরা তোমার সব শালীরা মিলে তোমাকে ‘শালীবাহন রাজা’ খেতাব দেব।

অক্ষয়। শালীবাহন দি সেকেণ্ড্‌?

শৈলবালা। সেকেণ্ড হতে যাবে কেন। সে শালীবাহনের নাম ইতিহাস থেকে একেবারে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তুমি হবে শালীবাহন দি গ্রেট।

অক্ষয়। বল কী। আমার রাজ্যকাল থেকে জগতে নূতন সাল প্রচলিত হবে?

গান

      তুমি আমায় করবে মস্ত লোক—

দেবে লিখে রাজার টিকে প্রসন্ন ওই চোখ।

[ শৈলবালার প্রস্থান
মৃত্যুঞ্জয় ও দারুকেশ্বরের প্রবেশ

একটি বিসদৃশ লম্বা, রোগা, বুটজুতা-পরা, ধুতি প্রায় হাঁটুর কাছে উঠিয়াছে, চোখের নীচে কালি পড়া, ম্যালেরিয়া

রোগীর চেহারা, বয়স বাইশ হইতে বত্রিশ পর্যন্ত যেটা খুশি হইতে পারে। আর-একটি বেঁটে খাটো, অত্যন্ত

দাড়ি-গোঁফ-সংকুল, নাকটি বটিকাকার, কপালটি ঢিবি, কালোকোলো, গোলগাল

অক্ষয়। (অত্যন্ত সৌহার্দ্য-সহকারে উঠিয়া প্রবলবেগে শেক্‌হ্যাণ্ড করিয়া) আসুন মিস্টার ন্যাথানিয়াল, আসুন মিস্টার জেরেমায়া, বসুন বসুন। ওরে, বরফ-জল নিয়ে আয় রে, তামাক দে—

মৃত্যুঞ্জয়। (সহসা বিজাতীয় সম্ভাষণে সংকুচিত হইয়া মৃদুস্বরে) আজ্ঞে আমার নাম মৃত্যুঞ্জয় গাঙ্গুলি।

দারুকেশ্বর। আমার নাম শ্রীদারুকেশ্বর মুখোপাধ্যায়।

অক্ষয়। ছি মশায়। ও নামগুলো এখনো ব্যবহার করেন বুঝি? আপনাদের ক্রিশ্চান নাম? (আগন্তুকদিগকে হতবুদ্ধি নিরুত্তর দেখিয়া) এখনো বুঝি নামকরণ হয় নি? তা, তাতে বিশেষ কিছু আসে যায় না, ঢের সময় আছে।

অক্ষয়ের গুড়গুড়ির নল মৃত্যুঞ্জয়ের হাতে প্রদান। সে লোকটা ইতস্তত করিতেছে দেখিয়া

বিলক্ষণ! আমার সামনে আবার লজ্জা। সাত বছর বয়স থেকে লুকিয়ে তামাক খেয়ে পেকে উঠেছি। ধোঁয়া লেগে লেগে বুদ্ধিতে ঝুল পড়ে গেল। লজ্জা যদি করতে হয় তা হলে আমার তো আর ভদ্রসমাজে মুখ দেখাবার জো থাকে না।


তখন সাহস পাইয়া দারুকেশ্বর মৃত্যুঞ্জয়ের হাত হইতে ফস করিয়া নল কাড়িয়া লইয়া ফড়্‌ ফড়্‌

শব্দে টানিতে আরম্ভ করিল। অক্ষয় পকেট হইতে কড়া বর্মার চুরোট বাহির করিয়া

মৃত্যুঞ্জয়ের হাতে দিলেন। যদিচ তাহার চুরোট অভ্যাস ছিল না, তবু সে সদ্যস্থাপিত

ইয়ার্কির খাতিরে প্রাণের মায়া পরিত্যাগ করিয়া মৃদুমন্দ টান দিতে

লাগিল এবং কোনো গতিকে কাশি চাপিয়া রাখিল

অক্ষয়। এখন কাজের কথাটা শুরু করা যাক। কী বলেন।