চিরকুমার-সভা
মৃত্যুঞ্জয় চুপ করিয়া রহিল

দারুকেশ্বর। তা নয় তো কী। শুভস্য শীঘ্রং।

অক্ষয়। (গম্ভীর হইয়া) মুর্গি না মটন?

মৃত্যুঞ্জয় অবাক হইয়া মাথা চুলকাইতে লাগিল

দারুকেশ্বর কিছু না বুঝিয়া অপরিমিত হাসিতে আরম্ভ করিল

আরে মশায়, নাম শুনেই হাসি। তা হলে তো গন্ধে অজ্ঞান এবং পাতে পড়লে মারাই যাবেন। তা, যেটা হয় মনস্থির করে বলুন— মুর্গি হবে না মটন হবে।

তখন দুজনে বুঝিল আহারের কথা হইতেছে। ভীরু মৃত্যুঞ্জয় নিরুত্তর হইয়া ভাবিতে লাগিল

দারুকেশ্বর লালায়িত রসনায় একবার চারি দিকে চাহিয়া দেখিল

ভয় কিসের মশায়। নাচতে বসে ঘোমটা?

দারুকেশ্বর। (দুই হাতে দুই পা চাপড়াইয়া, হাসিয়া) তা মুর্গিই ভালো, কট্‌লেট, কী বলেন।

মৃত্যুঞ্জয়। (সাহস পাইয়া) মটনটাই বা মন্দ কী ভাই। চপ!

অক্ষয়। ভয় কী দাদা, দু’ই হবে। দোমনা করে খেয়ে সুখ হয় না। (চাকরকে ডাকিয়া) ওরে, মোড়ের মাথায় যে হোটেল আছে সেখান থেকে কলিমদ্দি খানসামাকে ডেকে আন্‌ দেখি। (বুড়ো আঙুল দিয়া মৃত্যুঞ্জয়ের গা টিপিয়া মৃদুস্বরে) বিয়ার না শেরি?


মৃত্যুঞ্জয় লজ্জিত হইয়া মুখ বাঁকাইল

দারুকেশ্বর। হুইস্কির বন্দোবস্ত নেই বুঝি?

অক্ষয়। (পিঠ চাপড়াইয়া) নেই তো কী। বেঁচে আছি কী করে।

গান

অভয় দাও তো বলি আমার wish কী—

একটি ছটাক সোডার জলে পাকি তিন পোয়া হুইস্কি।


ক্ষীণপ্রকৃতি মৃত্যুঞ্জয়ও প্রাণপণে হাস্য করা কর্তব্য বোধ করিল

এবং দারুকেশ্বর ফস করিয়া একটা বই টানিয়া লইয়া টপাটপ বাজাইতে আরম্ভ করিল

দারুকেশ্বর। দাদা, ওটা শেষ করে ফেলো।

গান
অভয় দাও তো বলি আমার wish কী—

অক্ষয়। (মৃত্যুঞ্জয়কে ঠেলা দিয়া) ধরো না হে, তুমিও ধরো।