যোগাযোগ

মোতির মা। না গো, না, ওটা ওঁদের দেমাক। সংসারে ওঁদের যোগ্য কিছুই মেলে না, ওঁরা সবার উপরে।

নবীন। মেজোবউ, এত বড়ো দেমাক সবাইকে সাজে না, কিন্তু ওঁদের কথা আলাদা।

মোতির মা। তাই বলে কি আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি করতে হবে?

নবীন। আত্মীয়স্বজন বললেই আত্মীয়স্বজন হয় না। ওঁরা আমাদের থেকে সম্পূর্ণ আর-এক শ্রেণীর মানুষ। সম্পর্ক ধরে ওঁদের সঙ্গে ব্যবহার করতে আমার সংকোচ হয়।

মোতির মা। যিনি যত বড়ো লোকই হোন-না কেন, তবু সম্পর্কের জোর আছে এটা মনে রেখো।

নবীন। আর কিছুদিন দেখাই যাক-না। দাদার আগ্রহটাও একটু বেড়ে উঠুক, তাতে ক্ষতি হবে না।

পরের দৃশ্য

শ্যামাসুন্দরী মধুসূদনের ডেস্কের উপর থেকে কুমুদিনীর ছবি তুলে নিয়ে টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলছিল — মধুসূদনকে আসতে দেখে তাড়াতাড়ি লুকিয়ে ফেললে। শ্যামাসুন্দরী নিয়মমতো পানের বাটা নিয়ে মধুসূদনকে পান দিলে, তার পরে পায়ের কাছে বসে পায়ে হাত বুলিয়ে দিতে লাগল।

 

একটা রুপোর ফোটোগ্রাফের ফ্রেম নিয়ে

 

মধুসূদন। এই নাও, তোমার জন্যে কিনে এনেছি।

 

ব্রাউন কাগজে জিনিসটা মোড়া ছিল, আস্তে আস্তে

কাগজের মোড়কটা খুলে ফেলে

 

শ্যামাসুন্দরী। কী হবে এটা?

মধুসূদন। জান না? এতে ফোটোগ্রাফ রাখতে হয়।

শ্যামাসুন্দরী। কার ফোটোগ্রাফ রাখবে?

মধুসূদন। তোমার নিজের। সেদিন সেই-যে ছবিটা তোলানো হয়েছে।

শ্যামাসুন্দরী। আমার এত সোহাগে কাজ নেই।

 

সেই ফ্রেমটা ছুঁড়ে মেজের উপর ফেলে দিলে।

 

মধুসূদন। এর মানে কী হল?

শ্যামাসুন্দরী। এর মানে কিছুই নেই।

 

বলে মুখে হাত দিয়ে কেঁদে উঠল, তার পরে বিছানা থেকে

মেজের উপর পড়ে মাথা ঠুকতে লাগল