যোগাযোগ

নবীন। আশ্চর্য হবার তো কিছু নেই। যে ঘুমন্ত ক্ষুধাকে বউরানী জাগিয়েছেন তার অন্ন জোগাতে পারেন নি। তাই সে অনর্থপাত করতে বসেছে।

মোতির মা। তবে কি এটা এমনি ভাবেই চলবে?

নবীন। যে আগুন নেভাবার কোনো উপায় নেই সেটাকে আপনি জ্বলে ছাই হওয়া পর্যন্ত তাকিয়ে দেখতে হবে।

 

কুমুদিনীর প্রবেশ

 

কুমুদিনী। আজ তোমার ঘরে আমাকে জায়গা দিতে হবে বোন।

মোতির মা। সে কী কথা!

কুমুদিনী। আজ রাত্তির থেকেই আমার শুভ নির্বাসন মঞ্জুর হয়েছে। কাল যাব দাদার ওখানে। ঠাকুরপো, রাগ কোরো না।

নবীন। বউরানী, ফিরে আসতে দেরি কোরো না এই কথাটা সব মন দিয়ে বলতে পারলে বেঁচে যেতুম — কিন্তু মুখ দিয়ে বেরোল না। যাদের কাছে তোমার যথার্থ সম্মান সেইখানেই থাকো গিয়ে। অভাগা নবীনকে যদি কোনো কারণে কোনো কালে দরকার হয় স্মরণ কোরো।

কুমুদিনী। আপাতত দরকার তোমার ঘরে আশ্রয় নেওয়া। রাগ করবে না তো?

নবীন। রাগ করব আমি! দ্বারের বাইরে দরোয়ানি করবার এমন সুযোগ আর আমি পাব না।

কুমুদিনী। আনন্দে ঘুম তো হবে না সারা রাত — তোমাকেও যদি জাগিয়ে রাখি ঠাকুরপো!

নবীন। তা হলে তো আমার ঘরে কোজাগরী লক্ষ্মীপূর্ণিমা হবে।

কুমুদিনী। তোমাদের ভাগ্নী ওই ফুট্‌কিকে ডেকে আনো তো ভাই।

নবীন। কেন, তাকে কিসের দরকার?

কুমুদিনী। সীতার অগ্নিপ্রবেশে সেই তো সীতা সেজেছিল। আবার শুনব তার মুখে তার পালার শেষ কথা ক'টি।

[ নবীনের প্রস্থান

মোতির মা। ইতিহাসটা খুলে বলো দিদি।

কুমুদিনী। সেই একই কথা। হরিণী পিছু হটছিল, ব্যাধ তার গলায় ফাঁসটা ধরে জোরে দিয়েছিল টান। ফাঁস গেল ছিঁড়ে। ব্যাধ অহংকার করে বললে, ভালোই হল ; হরিণ নম্র হয়ে বললে, ভালোই হয়েছে।

মোতির মা। এইখানেই কি শেষ হবে বোন? অদৃষ্টের মৃগয়া যে এখনো চলবে।

কুমুদিনী। তা জানি, ওই ব্যাধের হাতে ধনুক আছে, বল্লম আছে, খাঁড়া আছে, আর হরিণীর আছে কেবল তার শেষ পরিত্রাণ মরণ।

ফুট্‌কিকে লইয়া নবীনের প্রবেশ

কুমুদিনী। ফুট্‌কি!

ফুট্‌কি। কী রানীমা!

কুমুদিনী। আগুন থেকে বেরিয়ে এসে সীতা কী বললেন গান গেয়ে বল্‌।

ফুট্‌কির গান