প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
মধুসূদন। কথা কাটাকাটি করায় আমার অভ্যেস নেই — সংক্ষেপে জানতে চাই, এইরকম বরাবরই চলবে নাকি?
কুমুদিনী। সে আমার অদৃষ্টের কথা, কী করে জানব মেয়াদ কত দিনের।
মধুসূদন। আচ্ছা, থাকো এইখানে। সাধ্য-সাধনা করা আমার ধাতে নেই। চৌকিদার এখনি টহল দিয়ে যাবে, দরজাটা বন্ধ রেখো।
[ কুমুদিনীর প্রস্থান
নবীনের প্রবেশ
মধুসূদন। দাঁড়াও এখানে, শোনো আমার কথা। বাড়িতে কী-সব ব্যাপার হচ্ছে চোখ রাখ কি?
নবীন। কেন দাদা, কী হয়েছে?
মধুসূদন। বড়োবউ যে কাণ্ডটা করতে বসেছে তার কারণটা কী সে কি আমি জানি নে মনে কর?
নবীন। তোমার কী মনে হচ্ছে বলো।
মধুসূদন। মেজোবউ ওর মাথা বিগড়োতে বসেছেন সন্দেহ নেই।
নবীন। সে কী কথা দাদা! মেজোবউ তো —
মধুসূদন। তর্ক কোরো না। আমি বলে রাখছি, এতে তোমাদের ভালো হবে না।
[ প্রস্থান
মোতির মার প্রবেশ
নবীন। শোনো শোনো, কথাটা শুনে যাও, একটা ফ্যাসাদ বেধেছে।
মোতির মা। কেন, কী হয়েছে?
নবীন। সে জানেন অন্তর্যামী আর দাদা, আর সম্ভবত তুমি। কিন্তু তাড়া আরম্ভ হয়েছে আমার উপরেই।
মোতির মা। কেন বলো দেখি?
নবীন। যাতে আমার দ্বারা তোমার সংশোধন হয়, আর তোমার দ্বারা সংশোধন হয় ওঁর নতুন ব্যবসায়ের নতুন আমদানির।
মোতির মা। তা বেশ, আমার উপরে তোমার সংশোধনের কাজটা শুরু করে দাও, দেখি দাদার চেয়ে তোমার হাতযশ আছে কি না।
নবীন। দাদার উড়ে চাকরটা ওঁর দামি ডিনর সেটের একটা পিরিচ ভেঙেছিল, তার জরিমানার প্রধান অংশ আমাকেই দিতে হয়েছিল ; কেননা জিনিসটে ছিল আমার জিম্মেয়। কিন্তু এবারে যে দামি জিনিসটি ঘরে এল সেও কি আমারই জিম্মে? একটু কিছু জখম হলেই জরিমানাটা তোমাতে-আমাতেই বাঁটোয়ারা করে দিতে হবে। অতএব যা করতে হয় — আমাকে আর দুঃখ দিয়ো না, মেজোবউ।
মোতির মা। জরিমানা বলতে কী বোঝায় শুনি।
নবীন। রজবপুরে চালান করে দেবেন ; মাঝে মাঝে তো সেই রকম ভয় দেখান।
মোতির মা। ভয় পাও বলেই ভয় দেখান। একবার তো পাঠিয়েছিলেন, আবার রেলভাড়া দিয়ে ফিরিয়ে আনতে হয় নি? তোমার দাদা রেগেও হিসেবে ভুল করেন না। জানেন আমাকে ঘরকন্না থেকে বরখাস্ত করলে সেটা একটুও সস্তা হবে না।
নবীন। বুঝলুম, এখন কী করতে হবে বলো-না।
মোতির মা। যাও, তোমার দাদাকে বলো গে যাও, যত বড়ো রাজাই হোন-না, মাইনে করে লোক রেখে রানীর মান ভাঙাতে পারবেন না — মানের বোঝা