যোগাযোগ
গোমৃগদ্বিজ কাউকে মানবার মতো মানুষ নয়। তবু যদি বলো একবার নাহয় —

বিপ্রদাস। না, না, কিছু বোলো না।

কুমুদিনী। কাকাবাবু, বারণ করে পাঠাও।

দেওয়ানজি। কী বারণ করব?

কুমুদিনী। পাখি মারতে।

বিপ্রদাস। ওরা ভুল বুঝবে, কুমু, সইবে না।

কুমুদিনী। তা বুঝুক ভুল। মান অপমান শুধু ওদের একলার নয়।

বিপ্রদাস। রাগ করিস নে কুমু। আমিও একদিন পাখি মেরেছি, তখন অন্যায় বলে বুঝতেই পারি নি। এদেরও সেই দশা।

কুমুদিনী। জীবহত্যা করে এরা যদি আমোদ পায় করুক আমোদ। কিন্তু এদের কি ভদ্রতাও নেই? তোমার অনুমতিও নিল না। এত অবজ্ঞা তোমাদের 'পরে!

বিপ্রদাস। এ ভদ্রতার কথা নয়, কুমু, হয়তো আত্মীয়তার দাবি।

কুমুদিনী। আত্মীয়তা! আমাকে ছেলেমানুষের মতো ভোলাচ্ছ কেন? আমার ঘর থেকে কোনোদিন একখানা বই তুমি সরাও না আমাকে না জিজ্ঞাসা করে। আত্মীয়ের কাছে ভদ্র হবার দরকার নেই এ তো কোনোদিন তুমি আমাকে বল নি! কাকাবাবু!

দেওয়ানজি। কী মা!

কুমুদিনী। আমি শুনতে পেলুম, দাদা ওঁদের আনবার জন্যে স্টেশনে গিয়েছিলেন। কেন তোমরা যেতে দিলে?

দেওয়ানজি। আমরা তো জানতুমই না।

কুমুদিনী। দাদা গিয়েছিলেন অভিমান ভাসিয়ে দিয়ে আমারই জন্যে। তার পরে এঁরা কি একবার দেখতে এসেছিলেন কাকাবাবু?

দেওয়ানজি। না।

কুমুদিনী। কেবলমাত্র টাকার জোরে এমন মানুষকে অবজ্ঞা করতে সাহস করলেন! দাদা কেন নিজেকে খাটো করলেন আমার জন্যে! আমার মরণ হল না কেন?

বিপ্রদাস। কুমু, গোড়া থেকেই বুঝতে পেরেছি আমরা জাতে আলাদা। এখনো যদি বলিস এ বিয়ে আমি ভেঙে দিতে পারি।

দেওয়ানজি। চুপ করো বড়োবাবু, এ-সব কথা এখন নয়, সময় বয়ে গেছে।

বিপ্রদাস। না দেওয়ানজি, না — সময় কাকে বলছ তুমি! এই পাঁজির লগ্ন! কুমুর সমস্ত জীবন যে তার চেয়ে অনেক বড়ো সময় নিয়ে।

দেওয়ানজি। সমাজে —

বিপ্রদাস। সমাজকে ভয় কর তোমরা, আমি তার চেয়ে ভয় করি অধর্মকে। আমার সমাজ বাঁচাবার জন্যে আমি মারব কুমুকে! কুমু!

কুমুদিনী। কী দাদা?

বিপ্রদাস। এখনো বল্‌ তুই। তোর মত পেলে এ বিয়ে ভাঙতে আমি একটুও দ্বিধা করব না।

কুমুদিনী। আমি তো জানি, এ বিয়ে হয়ে গেছে প্রথম থেকেই। তোমার ঘটক ঘটকালি করে নি, যিনি করেছেন তাঁকে প্রণাম করে ভালো মন্দ সব মেনে নিলুম। দাদা, রাগ করে তোমার আশীর্বাদ থেকে আমাকে একটু [ও] বঞ্চিত কোরো না।