প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
মধুসূদন। মানে কী হল?
শ্যামাসুন্দরী। মানে এই, বউ এনেছ, ওকে সিংহাসনে বসানো চলবে কিন্তু ওকে অর্ধাঙ্গ করতে পারবে না, শেষকালে তোমাকেই একদিন সংসার ছেড়ে রজবপুরে যেতে হয় বা।
মধুসূদন। বড়োবউ!
[ উভয়ের প্রস্থান
মোতির মা ও কুমুদিনীর প্রবেশ। [ কুমুদিনী ] দেরাজ খুলে চমকে উঠে মাটিতে বসে পড়ল,
পাথরের মূর্তির মতো শক্ত হয়ে বসে রইল। তাড়াতাড়ি কাছে এসে
মোতির মা। কী হয়েছে বলো দিদি।
কুমু নিরুত্তর
কী হয়েছে, বলো দিদি, লক্ষ্মী আমার।
মুখে কথা বেরোল না, ঠোঁট কাঁপতে লাগল
বলো দিদি, আমাকে বলো কোথায় তোমার বেজেছে।
রুদ্ধকণ্ঠে
কুমুদিনী। নিয়ে গেছে চুরি করে।
মোতির মা। কী নিয়েছে দিদি?
কুমুদিনী। আমার আংটি, দাদার আংটি!
মোতির মা। কে নিয়ে গেছে?
কুমু উঠে দাঁড়িয়ে, কারও নাম না করে বাইরের
অভিমুখে ইঙ্গিত করলে
মোতির মা। শান্ত হও ভাই, ঠাট্টা করেছে তোমার সঙ্গে, আবার ফিরিয়ে দেবে।
কুমুদিনী। নেব না ফিরিয়ে, দেখব কত অত্যাচার করতে পারে ও।
মোতির মা। আচ্ছা, সে হবে পরে। এখন মুখে কিছু দেবে। সমস্ত দিন তোমার ভালো করে খাওয়াই হয় নি।
কুমুদিনী। না, পারব না, এখানকার খাবার আমার গলা দিয়ে নাববে না।
মোতির মা। লক্ষ্মীটি ভাই, আমার খাতিরে খাও।
কুমুদিনী। একটা কথা জিজ্ঞাসা করি, আজ থেকে আমার নিজের বলে কিছুই রইল না?
মোতির মা। না, রইল না, যা-কিছু রইল সে স্বামীর মর্জির উপরে। জান না চিঠিতে দাসী বলে দস্তখত করতে হয়?
কুমুদিনী। রাজা অজ ইন্দুমতীর পরিচয়ে তাঁকে গৃহিণী বলেছেন, মন্ত্রী বলেছেন, সখী বলেছেন, প্রিয়শিষ্যা বলেছেন, এই ফর্দের মধ্যে কোথাও তো দাসীর উল্লেখ নেই। স্ত্রী যাদের দাসী তারা কোন্ দাসের জাতের মানুষ?
মোতির মা। ভাই, ওই লোকটিকে এখনো চেনো নি। ও যে কেবল অন্যকে গোলামি করায় তা নয়, নিজের গোলামি নিজে করে। যেদিন আপিসে যেতে পারে না, নিজের বরাদ্দ থেকে সেদিনকার টাকা কাটা পড়ে। আত্মীয় বলে ও কাউকে মানে না, এ বাড়িতে কর্তা থেকে চাকর চাকরানী পর্যন্ত সবাই গোলাম।
কুমুদিনী। সেই ভালো, আমি সেই গোলামিই করব। আমার প্রতিদিনের খোরপোশ হিসেব করে প্রতিদিন শোধ করে দেব। এ বাড়িতে বিনা মাইনের স্ত্রী বাঁদি হয়ে থাকব না। চলো আমাকে কাজে ভর্তি করে নেবে। ঘরকন্নার ভার তোমার উপরেই তো, আমাকে তোমার অধীনে খাটিয়ে নিয়ো, আমাকে রানী বলে কেউ যেন না ঠাট্টা করে।
হেসে কুমুর চিবুক ধরে
মোতির মা। তা হলে শুরু করি আমার প্রভুত্ব। হুকুম করছি চলো এখন খেতে। আর তো দেরি নেই। আজ বাড়ি-ভর্তি লোক। তোমার শরীর ভালো নেই, সবাইকে ঠেকিয়ে রেখেছি। তারা তো আমাকে খেয়ে ফেলবে। তাদের আর ঠেকানো যাবে না। একটুখানি খেয়ে নিয়েই তুমি ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ো গে।
কুমুদিনী। দেখো ভাই, নিজেকে দেব বলেই তৈরি হয়ে এসেছিলুম, কিন্তু ও কিছুতেই দিতে দিলে না। এখন দাসী নিয়েই থাকুক। আমাকে পাবে না।
মোতির মা। কাঠুরে গাছকে কাটতেই জানে, পায় শুধু চ্যালা কাঠ। মালী গাছকে রাখতে জানে, পায় সে ফুল। তুমি পড়েছ কাঠুরের হাতে, ও ব্যাবসাদার।
কুমুদিনী। আমার আর কিছুই চাই নে, আমাকে একটুখানির জন্যে নিয়ে যাও আড়ালে, অন্তত দশ মিনিটের জন্যে একলা থাকতে দাও।
মোতির মা। আচ্ছা ভাই, তুমি এই ঘরটার মধ্যে যাও। আমি দরজার বাইরে রইলুম। কাউকে ঢুকতে দেব না।
কুমুর ঘরে প্রবেশ, দ্বার রোধ
হায় রে, এমন কপালও করেছিলি!
গানের দলের গান
প্রথম দল। আহা আঁখি জুড়ালো হেরিয়ে —
মনোমোহন মিলনমাধুরী, যুগলমুরতি॥