প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
প্রথমা। দেখ্ ভাই গঙ্গাজল, আমাদের নতুন রানী[র] বয়েস বড়ো কম নয়, বোধ হয় পলাশির যুদ্ধের সময় জন্মেছিল।
দ্বিতীয়া। একটু পোষ্টাই নেই গায়ে। বুঝি শিবের মতো বর পাবার জন্যে এতদিন না খেয়ে তপিস্যে করছিল।
প্রথমা। বর তো জুটল। এখন আমাদের রাজবাড়ির ক্ষীরসর পেটে পড়লে দুদিনে গড়নটা মোলায়েম হয়ে আসবে।
তৃতীয়া। হাঁগা রানী, গায়ে কী রঙ মাখ তুমি? বিলেত থেকে তোমার দাদা বুঝি কিছু আনিয়ে দিয়েছে!
দ্বিতীয়া। ওলো, শুনেছি মেমসাহেবদের ঘরে আঁতুড়-ঘরে মদে চুবিয়ে চান করায়, রঙ ধব্ধবে হয়ে ওঠে। এদের ঘরে বিলেতে আনাগোনা আছে কি না, এরা সব জানে।
তৃতীয়া। আচ্ছা ভাই, বউরানীর যে গা-ভরা গয়না দেখছি এ কি সব বাপের বাড়ি থেকে এনেছে?
প্রথমা। তাই তো শুনতে পাই। কিন্তু দেখ্-না, গয়নাগুলোর গড়ন দেখ্, কোন্ মান্ধাতা আমলের ফ্যাশান।
দ্বিতীয়া। ওই-যে আছেন মোতির মা — ক'নে বাড়িতে আসা অবধি তাকে দিনরাত আগলে আগলে বেড়াচ্ছে।
তৃতীয়া। বউরানী, দেখে নাও, উনি হচ্ছেন তোমার ছোটো জা, তোমার দেওর নবীনের বউ। এতদিন ঘরকন্নার সমস্ত ভার ছিল ওঁরই হাতে, এখন তুমি এসেছ ঘরের সত্যি গিন্নি হয়ে, তাই মেকি গিন্নির মাথায় মাথায় ভাবনা পড়েছে।
প্রথমা। খোশামোদ করে তোমাকে হাত করবার চেষ্টায় লেগেছেন, এই কথাটা মনে রেখো।
দ্বিতীয়া। খুব আদর দেখাচ্ছেন কিন্তু শেষকালে তার দাম চুকিয়ে নেবেন।
তৃতীয়া। চল্ ভাই, বউয়ের ভাগ নিয়ে ওর সঙ্গে মামলা বাধিয়ে লাভ কী বল্। ফুলশয্যের নেমন্তন্নে এসেছি — আমোদ আহ্লাদ করব — বাতি নিববে, আমরাও চলে যাব। তার পরে দুই জায়ে মিলে রাজ্যি ভাগ চলবে, দেখব কার ভাগে কতটা পড়ে।
প্রথমা। গঙ্গাজল, আর নয়। ওই এল। মান বাঁচাতে চাস তো দৌড় মার্। দেখ্-না ওর মুখের ভাবখানা, যেন হাতে মাথা কাটবে।
[কুমু ব্যতীত সকলের প্রস্থান
কুমুদিনী। ঠাকুর! কোথায় আমায় আনলে!
মোতির মার প্রবেশ
মোতির মা। মন কেমন করছে ভাই! ওই-সব মেয়েদের কথায় কান দিয়ো না। প্রথম কিছুদিন তোমার উপর উপদ্রব চলবে, টেপাটেপি বলাবলি করবে, তার পরে কণ্ঠ থেকে ক্রমে ক্রমে বিষ নেমে গেলেই থেমে যাবে। বউরানী, আমি তোমার চেয়ে বয়সে অনেক বড়ো। কিন্তু ছোটো জা, সম্পর্কে ছোটো। আমার কাছে মন খুলে কথা বোলো দিদি, নতুন চেনা বলে যেন বাধো-বাধো না করে।