গোড়ায় গলদ
সম্বন্ধে মত বদলাতে হয়।

ইন্দুমতী। আমার তো তার দরকার হবে না। সে লেখা তোদের ভালো লাগে না—আমার ভালো লেগেছে। সে আরো ভালো—আমার কবি কেবল আমারই কবি থাকবে, পৃথিবীতে তাঁর কেবল একটিমাত্র পাঠক থাকবে—

কমলমুখী। ছাপবার খরচ বেঁচে যাবে—

ইন্দুমতী। সবাই তাঁর কবিত্বের প্রশংসা করলে আমার প্রশংসার মূল্য থাকবে না।

কমলমুখী। সে ভয় তোকে করতে হবে না। যা হোক, তোর গয়লাটিকে তোর পছন্দ হয়েছে তা নিয়ে তোর সঙ্গে ঝগড়া করতে চাই নে। তাকে নিয়ে তুই চিরকাল সুখে থাক্‌ বোন। তোর গোয়াল দিনে দিনে পরিপূর্ণ হয়ে উঠুক।

ইন্দুমতী। ঐ বিনোদবাবু আসছেন। মুখটা ভারি বিমর্ষ দেখছি।

[ প্রস্থান
বিনোদবিহারীর প্রবেশ

কমলমুখী। তাঁকে এনেছেন?

বিনোদবিহারী। তিনি তাঁর বাপের বাড়ি গেছেন, তাঁকে আনবার তেমন সুবিধে হচ্ছে না।

কমলমুখী। আমার বোধ হচ্ছে তিনি যে আমার সঙ্গিনীভাবে এখানে থাকেন সেটা আপনার আন্তরিক ইচ্ছে নয়।

বিনোদবিহারী। আপনাকে আমি বলতে পারি নে, তিনি এখানে আপনার কাছে থাকলে আমি কত সুখী হই। আপনার দৃষ্টান্তে তাঁর কত শিক্ষা হয়। যথার্থ ভদ্র স্ত্রীলোকের কী রকম আচারব্যবহার কথাবার্তা হওয়া উচিত তা আপনার কাছে থাকলে তিনি বুঝতে পারবেন। বেশ সম্ভ্রম রক্ষা করে চলা অথচ নিতান্ত জড়োসড়ো হয়ে না থাকা, বেশ শোভন লজ্জাটুকু রাখা অথচ সহজভাবে চলাফেরা, এক দিকে উদার সহৃদয়তা আর-এক দিকে উজ্জ্বল বুদ্ধি, এমন দৃষ্টান্ত তিনি আর কোথায় পাবেন।

কমলমুখী। আমার দৃষ্টান্ত হয়তো তাঁর পক্ষে সম্পূর্ণ অনাবশ্যক। শুনেছি আপনি তাঁকে অল্পদিন হল বিবাহ করেছেন, হয়তো তাঁকে ভালো করে জানেন না—

বিনোদবিহারী। তা বটে। কিন্তু যদিও তিনি আমার স্ত্রী তবু এ কথা আমাকে স্বীকার করতেই হবে আপনার সঙ্গে তাঁর তুলনা হতে পারে না।

কমলমুখী। ও কথা বলবেন না। আপনি হয়তো জানেন না আমি তাঁকে বাল্যকাল হতে চিনি। তাঁর চেয়ে আমি যে কোনো অংশে শ্রেষ্ঠ এমন আমার বোধ হয় না।

বিনোদবিহারী। আপনি তাঁকে চেনেন?

কমলমুখী। খুব ভালোরকম চিনি।

বিনোদবিহারী। আমার সস্বন্ধে তিনি আপনার কাছে কোনো কথা বলেছেন?

কমলমুখী। কিছু না। কেবল বলেছেন, তিনি আপনার ভালোবাসার যোগ্য নন। আপনাকে সুখী করতে না পেরে এবং আপনার ভালোবাসা না পেয়ে, তাঁর সমস্ত জীবনটা ব্যর্থ হয়ে আছে।

বিনোদবিহারী। এ তাঁর ভারি ভ্রম। তবে আপনার কাছে স্পষ্ট স্বীকার করি আমিই তাঁর ভালোবাসার যোগ্য নই। আমি তাঁর প্রতি বড়ো অন্যায় করেছি, কিন্তু সে তাঁকে ভালোবাসি নে বলে নয়। আমি দরিদ্র, বিবাহের পূর্বে সে কথা ভালো বুঝতে পারতুম না—কিন্তু লক্ষ্মীকে ঘরে এনেই যেন অলক্ষ্মীকে দ্বিগুণ স্পষ্ট দেখতে পেলুম;মনটা প্রতিমুহূর্তে অসুখী হতে লাগল। সেইজন্যেই আমি