গোড়ায় গলদ

নিমাই। বাগবাজারের চৌধুরীদের বাড়ির কাদম্বিনী, তার সঙ্গে আমার—

চন্দ্রকান্ত। (উচ্চস্বরে) নিমাই, তোমারও কবিত্ব! তবে তোমারও স্নায়ু বলে একটা বালাই আছে!

নিমাই। তা আছে ভাই। বোধ হয় একটু বেশি পরিমাণেই আছে। অবস্থা এমনি হয়েছে কিছুতেই একজামিনের পড়ায় মন দিতে পারি নে—শিগ্‌গির আমার একটি সদগতি না করলে—

চন্দ্রকান্ত। বুঝেছি। কিন্তু নিমাই, আমার ঘাড়ে পাপের বোঝা আর চাপাস নে। ভেবে দেখ্‌, পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করে দুটি অবলার সর্বনাশ করেছি—একটিকে স্বহস্তে নিয়েছি, আর-একটিকে প্রিয় বন্ধুর হাতে সমর্পণ করেছি—আর স্ত্রীহত্যার পাতকে আমাকে লিপ্ত করিস নে।

নিমাই। কিচ্ছু ভেব না ভাই। এবার যা করবে তাতে তোমার পূর্বকৃত পাপের প্রায়শ্চিত্ত হবে।

চন্দ্রকান্ত। ভ্যালা মোর দাদা। এ বেশ কথা বলেছিস ভাই। সকাল থেকে মরে ছিলুম। এখন একটু প্রাণ পাওয়া গেল। আমি এক্‌খনি যাচ্ছি। চাদরখানা নিয়ে আসি। অমনি বড়োবউয়ের পরামর্শটাও জানা ভালো।

[প্রস্থান

(অনতিবিলম্বে ছুটিয়া আসিয়া) বড়োবউ রাগ করে বাপের বাড়ি চলে গেছে। এ-সমস্তই কেবল তোদের জন্যে। না, আমি আর তোদের কারও সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখছি নে। তোরা পাঁচজনে এসে জুটিস, আমিও ছেলেমানুষদের সঙ্গে মিশে যা মুখে আসে তাই বকি, আর এই-সমস্ত অনর্থ বাধে। আমার চিরকালের ঘরের স্ত্রীটিকেই যদি ঘরে না রাখতে পারব তো তোদের স্ত্রী জুটিয়ে দিয়ে আমার কী এমন পরমার্থ লাভ হবে বল্‌ দেখি। না, তোদের কারো সঙ্গে আমি আর বাক্যালাপ করছি নে।


বিনোদবিহারী ও নলিনাক্ষের প্রবেশ

বিনোদবিহারী। চন্দরদা, তুমি আমার উপর রাগ করে চলে এলে ভাই, আমি আর থাকতে পারলুম না।

চন্দ্রকান্ত। না ভাই, তোদের উপর কি আমি রাগ করতে পারি। তবে মনে একটু দুঃখ হয়েছিল তা স্বীকার করি।

বিনোদবিহারী। কী করব চন্দরদা। আমি এত চেষ্টা করছি কিছুতেই পেরে উঠছি নে—

চন্দ্রকান্ত। কেন বল্‌ দেখি। ওর মধ্যে শক্তটা কী। মেয়েমানুষকে ভালোবাসতে পারিস নে? তুই কি কাঠের পুতুল।

নলিনাক্ষ। চন্দ্রবাবুর সঙ্গে কিন্তু আমার মতের একটুও মিল হচ্ছে না। ভালোবাসা কখনো জোর করে হয় না একটা গান আছে—

ভালোবাসিবে বলে ভালোবাসি নে।

আমার স্বভাব এই তোমা বৈ আর জানি নে।

আমি কিন্তু বিনু, সম্পূর্ণ তোমার দিকে।

বিনোদবিহারী। নলিন, একটু থাম্‌ তুই—এই বড়ো দুঃখের সময় আর হাসাস নে। চন্দরদা, কী জানি ভাই, একাদিক্রমে পঁচিশ বৎসরকাল বিয়ে না করে বিয়ে না করাটাই যেন একেবারে মুখস্থ হয়ে গেছে। এখন হঠাৎ এই বিয়েটা কিছুতেই মনের মধ্যে গ্রহণ করতে পারছি নে।

চন্দ্রকান্ত। তোর পায়ে পড়ি বিনু, তুই আমার গা ছুঁয়ে বল্‌, নিদেন আমার খাতিরে তোর স্ত্রীকে ভালোবাসবি। মনে কর্‌, তুই আমার বোনকে বিয়ে করেছিস।

নলিনাক্ষ। চন্দ্রবাবুর এ নিতান্ত অন্যায় কথা! বিনুর প্রতি উনি—