বাঁশরি
করতে তুমি।

বাঁশরি। সন্ন্যাসীর উপদেশ সোনার জলে বাঁধানো খাতায় লিখে রাখতুম। তার পরে প্রবৃত্তির জোর কলমে তার প্রত্যেক অক্ষরের উপর দিতুম কালির আঁচড় কেটে। প্রকৃতি জাদু লাগায় আপন মন্ত্রে, সন্ন্যাসীও জাদু করতেই চায় উলটো মন্ত্রে। ওর মধ্যে একটা মন্ত্র নিতুম মাথায়, আর-একটা মন্ত্রে প্রতিদিন প্রতিবাদ করতুম হৃদয়ে।

ক্ষিতিশ। এখন কাজের কথা পাড়া যাক। ইতিহাসের গোড়ার দিকটায় ফাঁক রয়েছে। ওদের বিবাহসম্বন্ধ সন্ন্যাসী ঘটাল কী উপায়ে।

বাঁশরি। প্রথমত সেনবংশ যে ক্ষত্রিয়, সেনানী শব্দ থেকে তার পদবীর উদ্ভব, ওরা যে কোনো-এক খ্রীস্ট-শতাব্দীতে এসেছিল কোনো-এক দক্ষিণপ্রদেশ থেকে দিগ্‌‍বিজয়ীবাহিনীর পতাকা নিয়ে বাংলার কোনো-এক বিশেষ বিভাগে, সেইটে প্রমাণ করে লিখল এক সংস্কৃত পুঁথি। কাশীর দ্রাবিড়ী পণ্ডিত করলে তার সমর্থন। সন্ন্যাসী স্বয়ং গেল সোমশংকরদের রাজ্যে। প্রজারা হাঁ করে রইল ওর চেহারা দেখে; কানাকানি করতে লাগল, কোনো-একটা দেব-অংশের ঝালাই দিয়ে এর দেহখানা তৈরি। সভাপণ্ডিত মুগ্ধ হল শৈবদর্শনব্যাখ্যায়। রাজাবাহাদুরের মনটা সাদা, দেহটা জোরালো, তাতে লাগল কিছু সন্ন্যাসীর মন্ত্র, কিছু লাগল প্রকৃতির মোহ। তার পরে এই যা দেখছ।

ক্ষিতিশ। হায় রে, সন্ন্যাসী কি আমাদের মতো অভাজনদের হয়ে স্থূল প্রকৃতির তরফে ঘটকালি করেন না!

বাঁশরি। রাখো তোমার ছিবলেমি। ভুল করেছি তোমাকে নিয়ে। যে মানুষ খাঁটি লিখিয়ে তার সামনে যখন দেখা দিয়েছে সৃষ্টিকল্পনার এমন একটা জীবন্ত আদর্শ দব্‌ দব্‌ করছে যার নাড়ি, তার মুখ দিয়ে কি বেরোয় খেলো কথা। কেমন করে জাগাব তোমাকে। আমি যে প্রত্যক্ষ দেখছি একটা মহারচনার পূর্বরাগ, শুনছি তার অন্তহীন নীরস কান্না। দেখতে পাচ্ছ না অদৃষ্টের একটা নিষ্ঠুর ব্যঙ্গ? থাক্‌ গে, শেষ হল আমার কথা। তোমার খাবার পাঠিয়ে দিতে চললুম।

প্রস্থানোদ্যম

ক্ষিতিশ। (ছুটে গিয়ে হাত চেপে ধরে) চাই নে খাবার। যেয়ো না তুমি।

বাঁশরি। (হাত ছিনিয়ে নিয়ে উচ্চহাস্যে) তোমার ‘বেমানান’ গল্পের নায়িকা পেয়েছ আমাকে! আমি ভয়ংকর সত্যি।

ড্রেসিং-গাউন-পরা সতীশের প্রবেশ

সতীশ। উচ্চহাসির আওয়াজ শুনলুম যে।

বাঁশরি। উনি এতক্ষণ স্টেজের মুনুবাবুর নকল করছিলেন।

সতীশ। ক্ষিতিশবাবুর নকল আসে নাকি।

বাঁশরি। আসে বইকি, ওঁর লেখা পড়লেই টের পাওয়া যায়। তুমি এঁর কাছে একটু বোসো, আমি ওঁর জন্য খাবার পাঠিয়ে দিইগে।

ক্ষিতিশ। দরকার নেই, কাজ আছে, দেরি করতে পারব না।

[ প্রস্থান

বাঁশরি। মনে থাকে যেন আজ বিকেলে সিনেমা–তোমারই ‘পদ্মাবতী’।

ক্ষিতিশ। (নেপথ্য হতে) সময় হবে না।

বাঁশরি। হবেই সময়, অন্য দিনের চেয়ে দু-ঘণ্টা আগে।