শ্রাবণগাথা

মিলাইলে চঞ্চল মধুকরগুঞ্জন।

নৃত্যের ভঙ্গে

এলে নবরঙ্গে,

সচকিত পল্লবে নাচে যেন খঞ্জন॥

রাজা। ওহে নটরাজ, সভাকবির মুখে আর শব্দমাত্র নেই। এর চেয়ে বড়ো সাধুবাদ আর আশা কোরো না।

সভাকবি। আছে মহারাজ, আছে, বলবার বিষয় আছে—হঠাৎ মুখ বন্ধ করে দেবেন না।

রাজা। আচ্ছা, বলো।

সভাকবি। আমি আধুনিক বটে, কিন্তু নাচ সম্বন্ধে আমি প্রাচীনপন্থী।

রাজা। কী বলতে চাও।

সভাকবি। নৃত্যকলায় দোষ আছে, ওটাকে হেয় করেই রাখাই শ্রেয়।

রাজা। কাব্যে কোথাও কোনো দোষ সম্ভব নয় বুঝি! কত কালিদাস এবং অকালিদাস দেখা গেল, ওঁদের শ্লোকগুলোর মধ্যে পাঁক বাঁচিয়ে চলা দায় যে।

সভাকবি। কাব্য বলুন, গীতকলা বলুন, ওরা অভিজাতশ্রেণীয়, ওদের দোষকেও শিরোধার্য করতে হয়। কিন্তু ঐ নৃত্যকলার আভিজাত্য নেই, গৌড়দেশের ব্রাহ্মণরা ওকে অনাচরণীয়া ব’লে থাকেন।

নটরাজ। কবিবর, তোমার গৌড়দেশের সূচনা হবার বহু পূর্বে যখন আদিদেবের আহ্বানে সৃষ্টি-উৎসব জাগল তখন তার প্রথম আরম্ভ হল আকাশে আকাশে বহ্নিমালার নৃত্যে। সূর্যচন্দ্রের নৃত্য আজও বিরাম পেল না, ষড়্‌ঋতুর নৃত্য আজও চলেছে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে। সুরলোকে আলোক-অন্ধকারের যুগলনৃত্য, নরলোকে অশ্রান্ত নৃত্য জন্মমৃত্যুর, সৃষ্টির আদিম ভাষাই এই নৃত্য, তার অন্তিমেও উন্মত্ত হয়ে উঠবে এই নৃত্যের ভাষাতেই প্রলয়ের অগ্নিনটিনী। মানুষের অঙ্গে অঙ্গে স্বর্গের আনন্দকে তরঙ্গিত করবার ভার নিয়েছি আমরাই; তোমাদের মোহাচ্ছন্ন চোখে নির্মল দৃষ্টি জাগাব নইলে বৃথা আমাদের সাধনা।

মম চিত্তে নিতি নৃত্যে কে যে নাচে

তাতা থৈ থৈ, তাতা থৈ থৈ, তাতা থৈ থৈ।

তারি সঙ্গে কী মৃদঙ্গে সদা বাজে

তাতা থৈ থৈ, তাতা থৈ থৈ, তাতা থৈ থৈ।

হাসিকান্না হীরা পান্না দোলে ভালে;

কাঁপে ছন্দে ভালো মন্দ তালে তালে;

নাচে জন্ম, নাচে মৃত্যু পাছে পাছে

তাতা থৈ থৈ, তাতা থৈ থৈ, তাতা থৈ থৈ।

কী আনন্দ, কী আনন্দ, কী আনন্দ—

দিবারাত্রি নাচে মুক্তি, নাচে বন্ধ;

সে তরঙ্গে ছুটি রঙ্গে পাছে পাছে

তাতা থৈ থৈ,তাতা থৈ থৈ, তাতা থৈ থৈ।

রাজা। এর উপরে আর কথা চলে না। এখন আমার একটা অনুরোধ আছে। আমি ভালোবাসি কড়া পাকের রস। বর্ষার সবটাই