শ্রাবণগাথা

এসো নীপবনে ছায়াবীথিতলে,

এসো করো স্নান নবধারাজলে।

দাও আকুলিয়া ঘন কালো কেশ,

পরো দেহ ঘেরি মেঘনীল বেশ—

কাজল নয়নে, যূথীমালা গলে,

এসো নীপবনে ছায়াবীথিতলে।

আজি খনে খনে হাসিখানি সখী,

অধরে নয়নে উঠুক চমকি।

মল্লারগানে তব মধুস্বরে

দিক বাণী আনি বনমর্মরে—

ঘন বরিষনে জলকলকলে

এসো নীপবনে ছায়াবীথিতলে॥

রাজা। উত্তম। কিন্তু চাঞ্চল্য যেন কিছু বেশি, বর্ষাঋতু তো বসন্ত নয়।

নটরাজ। তা হলে ভিতরে তাকিয়ে দেখুন। সেখানে পুলক জেগেছে, সে পুলক গভীর, সে প্রশান্ত।

সভাকবি। ঐ তো মুশকিল। ভিতরের দিকে? ও দিকটাতে বাঁধা রাস্তা নেই তো।

নটরাজ। পথ পাওয়া যাবে সুরের স্রোতে। অন্তরাকাশে সজল হাওয়া মুখর হয়ে উঠল। বিরহের দীর্ঘনিশ্বাস উঠেছে সেখানে—কার বিরহ জানা নেই। ওগো গীতরসিকা, বিশ্ববেদনার সঙ্গে হৃদয়ের রাগিনীর মিল করো।

ঝর ঝর ঝর ভাদর-বাদর,

বিরহকাতর শর্বরী।

ফিরিছে এ কোন্‌ অসীম রোদন

কানন কানন মর্মরি।

আমার প্রাণের রাগিনী আজি এ

গগনে গগনে উঠিল বাজিয়ে।

হৃদয় এ কী রে ব্যাপিল তিমিরে

সমীরে সমীরে সঞ্চরি॥

রাজা। কী বল হে, কী মনে হচ্ছে তোমার।

সভাকবি। সত্য কথা বলি, মহারাজ। অনেক কবিত্ব করেছি, অমরুশতক পেরিয়ে শান্তিশতকে পৌঁছবার বয়স হয়ে এল—কিন্তু এই যে এঁরা অশরীরী বিরহের কথা বলেন যা নিরবলম্ব, এটা কেমন যেন প্রেতলোকের ব্যাপার বলে মনে হয়।

রাজা। শুনলে তো, নটরাজ! একটু মিলনের আভাস লাগাও, অন্তত দুর থেকে আশা পাওয়া যায় এমন আয়োজন করতে দোষ কী।

সভাকবি। ঠিক বলেছেন, মহারাজ। পাত পেড়ে বসলে ওঁদের মতে যদি কবিত্ববিরুদ্ধ হয়, অন্তত রান্নাঘর থেকে গন্ধটা বাতাসে মেলে দিতে দোষ কী।