দ্বিতীয় ভাগ
ডাকছে। যাও-না উল্লাস, থামিয়ে দিয়ে এসোগে। আমার ভয় করছে। বড়ো অন্ধকার। ভজ্জুকে ডেকে দিই। ছি ছি উল্লাস, ভয় করতে লজ্জা করে না? আচ্ছা, আমি নিজে যাচ্ছি। আর তো রাত নেই। পুব দিক উজ্জ্বল হয়েছে। ও ঘরে বিছানায় খুকী চঞ্চল হয়ে উঠল। বাঞ্ছাকে ধাক্কা দিয়ে জাগিয়ে দাও। বাঞ্ছা শীঘ্র আমার জন্যে চা আনুক আর কিঞ্চিৎ বিস্কুট। আমি ততক্ষণ মুখ ধুয়ে আসি। রক্ষামণি, থাকো খুকুর কাছে। তুমিও সাজসজ্জা ক’রে তৈরী থাকো উল্লাস। বেড়াতে যাবো। উত্তম কথা। কিন্তু ঘাস ভিজে কেন? এক পত্তন বৃষ্টি হয়ে গেল বুঝি। এবার লণ্ঠনটা নিবিয়ে দাও। আর মণ্টুকে বলো, বারান্দা পরিষ্কার করে দিক। এখনি রেভারেণ্ড্‌ এন্ডার‍্‌সেন আসবেন। পণ্ডিত মশায়েরও আসবার সময় হল। ঐ শোনো, কুণ্ডুদের বাড়ি ঢং ঢং ক’রে ছটার ঘণ্টা বাজল।

আকাশপারে পুবের কোণে

কখন যেন অন্যমনে

ফাঁক ধরে ঐ মেঘে,

মুখের চাদর সরিয়ে ফেলে

বন্ধ চোখের পাতা মেলে

আকাশ ওঠে জেগে।

ছিঁড়ে-যাওয়া মেঘের থেকে

পুকুরে রোদ পড়ে বেঁকে

লাগায় ঝিলিমিলি,

বাঁশবাগানের মাথায় মাথায়

তেঁতুলগাছের পাতায় পাতায়

হাসায় খিলিখিলি।

হঠাৎ কিসের মন্ত্র এসে

ভুলিয়ে দিলে এক নিমেষে

বাদলবেলার কথা,

হারিয়ে পাওয়া আলোটিরে

নাচায় ডালে ফিরে ফিরে

ঝুমকো ফুলের লতা।