তেরো

হৃদয়ের অসংখ্য অদৃশ্য পত্রপুট

            গুচ্ছে গুচ্ছে অঞ্জলি মেলে আছে

                        আমার চার দিকে চিরকাল ধ ' রে

আমি-বনস্পতির এরা কিরণপিপাসু পল্লবস্তবক,

                       এরা মাধুকরী-ব্রতীর দল।

প্রতিদিন আকাশ থেকে এরা ভরে নিয়েছে

                           আলোকের তেজোরস,

নিহিত করেছে সেই অলক্ষ্য অপ্রজ্বলিত অগ্নিসঞ্চয়

                     এই জীবনের গূঢ়তম মজ্জার মধ্যে।

              সুন্দরের কাছে পেয়েছে অমৃতের কণা

                     ফুলের থেকে, পাখির গানের থেকে,

প্রিয়ার স্পর্শ থেকে, প্রণয়ের প্রতিশ্রুতি থেকে,

                     আত্মনিবেদনের অশ্রুগদ্‌গদ আকুতি থেকে —

            মাধুর্যের কত স্মৃতরূপ কত বিস্মৃতরূপ

                                দিয়ে গেছে অমৃতের স্বাদ,

                                      আমার নাড়ীতে নাড়ীতে।

            নানা ঘাতে প্রতিঘাতে সংক্ষুব্ধ

                       সুখদুঃখের ঝোড়ো হাওয়া নাড়া দিয়েছে

আমার চিত্তের স্পর্শবেদনাবাহিনী পাতায় পাতায়।

           লেগেছে নিবিড় হর্ষের অনুকম্পন,

এসেছে লজ্জার ধিক্কার, ভয়ের   সংকোচ, কলঙ্কের গ্লানি ,

                  জীবনবহনের প্রতিবাদ।

ভালোমন্দের বিচিত্র বিপরীত বেগ

                   নিয়ে গেছে আন্দোলন

                             প্রাণরসপ্রবাহে।

তার আবেগে বহে নিয়ে গেছে সর্বগৃধ্নু চেতনাকে

                             জগতের সর্বদানযজ্ঞের প্রাঙ্গণে।

           এই চিরচঞ্চল চিন্ময় পল্লবের অশ্রুত মর্মরধ্বনি

                  উধাও করে দেয় আমার জাগ্রত স্বপ্নকে

                      চিল-উড়ে-যাওয়া দূর দিগন্তে