পত্রপুট

জনহীন মধ্যদিনে মৌমাছির-গুঞ্জন-মুখর অবকাশে।

হাত-ধরে-বসে-থাকা বাষ্পাকুল নির্বাক্‌ ভালোবাসায়

            নেমে আসে এদেরই শ্যামল ছায়ার করুণা।

        এদেরই মৃদুবীজন এসে লাগে

            শয্যাপ্রান্তে নিদ্রিত দয়িতার

      নিশ্বাসস্ফুরিত বক্ষের চেলাঞ্চলে।

প্রিয়প্রত্যাশিত দিনের চিরায়মান উৎকন্ঠিত প্রহরে

    শিহর লাগাতে থাকে এদেরই দোলায়িত কম্পনে।

 

 

     বিশ্বভুবনের সমস্ত ঐশ্বর্যের সঙ্গে আমার যোগ হয়েছে

              মনোবৃক্ষের এই ছড়িয়ে-পড়া

                    রসলোলুপ পাতাগুলির সম্বেদনে।

এরা ধরেছে সূক্ষ্মকে, বস্তুর অতীতকে ;

            এরা তাল দিয়েছে সেই গানের ছন্দে

                      যার সুর যায় না শোনা।

এরা নারীর হৃদয় থেকে এনে দিয়েছে আমার হৃদয়ে

       প্রাণলীলার প্রথম ইন্দ্রজাল আদিযুগের,

      অনন্ত পুরাতনের আত্মবিলাস

                     নব নব যুগলের মায়ারূপের মধ্যে।

      এরা স্পন্দিত হয়েছে পুরুষের জয়শঙ্খধ্বনিতে

                   মর্তলোকে যার আবির্ভাব

        মৃত্যুর আলোকে আপন অমৃতকে উদ্‌বারিত করবার জন্যে

                           দুর্দাম উদ্যমে,

              জল-স্থল-আকাশ-পথে দুর্গমজয়ের

                       স্পর্ধিত যার অধ্যবসায়।

 

              আজ আমার এই পত্রপুঞ্জের

                        ঝরবার দিন এল জানি।

                শুধাই আজ অন্তরীক্ষের দিকে চেয়ে — -

                         কোথায় গো সৃষ্টির আনন্দনিকেতনের প্রভু,

               জীবনের অলক্ষ্য গভীরে