তপতী

কুমারসেন। (বিপাশাকে ইঙ্গিতে কাছে ডেকে) হঠাৎ এখানে এলে যে।

বিপাশা। ছুটি পেয়েছি যুবরাজ।

কুমারসেন। সুমিত্রা?

বিপাশা। সে বন্দিনীও ছুটি পেয়েছে।

কুমারসেন। মৃত্যু?

বিপাশা। না, নূতন প্রাণ।

কুমারসেন। অর্থ কী, বুঝিয়ে দাও।

বিপাশা। জালন্ধর ছেড়েছেন তিনি। গেছেন ধ্রুবতীর্থে, উপাসিকার দীক্ষা নেবেন।

কুমারসেন। তোমার কথাটাকে এখনো মনের মধ্যে ঠিক নিতে পারছি নে।

বিপাশা। যুবরাজ, সুমিত্রাকে তো চেনো। সূর্যের তপস্যা সেই জ্যোতির্ময়ী ছাড়া কে গ্রহণ করতে পারে আজকের দিনে। আলোকের দূতী যারা, ভোগের ভাণ্ডারে তাদের বন্ধন রুদ্রদেব সহ্য করতে পারেন না।

কুমারসেন। আর জালন্ধররাজ বুঝি শৃঙ্খল হাতে নিয়ে ছুটেছেন।

বিপাশা। মাটির বাঁধ দিয়ে নদীকে বেঁধে তার স্রোতকে রাজভাণ্ডারে জমা করবার জন্যে; তাঁর কথা জিজ্ঞাসা করো আমার ঐ পথের সঙ্গীকে।

কুমারসেন। তোমার পথের সঙ্গী?

বিপাশা। হাঁ যুবরাজ, আমার পথের সঙ্গী। চুপ করে রইলে! এর থেকে বুঝছি তুমি বুঝেছ। এর উপরে কথা চলে না।

কুমারসেন। এতদিনে বন্ধন গ্রহণ করলে, বিপাশা?

বিপাশা। বিপাশা সিন্ধুনদীতে মিলেছে, সে মুক্তধারার মিলন।

কুমারসেন। ওঁর নামটি বলো।

বিপাশা। ওঁর নাম নরেশ। রাজা বিক্রমের বৈমাত্র ভাই। ডেকে আনছি।

কুমারসেন। নমস্কার, রাজকুমার।

নরেশ। নমস্কার।

কুমারসেন। তোমার মতো অতিথিকে পেয়ে আমার আজকের দিন সার্থক।

নরেশ। আমি আমার মহারানীর অনুবর্তী— তীর্থযাত্রী আমি, পথের অতিথি। তোমার দ্বারে আজ যে-অতিথি অনাহূত এসেছেন, তাঁর সংবাদ পেয়েছ? প্রস্তুত হয়েছ তো?

কুমারসেন। এই মাত্র সংবাদ পেয়েছি। আয়োজন নেই, কিন্তু আহ্বান করতে হবে। বিশেষ করে আমারই সঙ্গে তাঁর যুদ্ধের কারণ কী ঘটছে তা এখনো পর্যন্ত বুঝতেই পারি নি।

নরেশ। কারণের প্রয়োজন হয় না। অন্ধ বিদ্বেষ অন্ধ ঈর্ষা বাইরে থেকে পথ খোঁজে না, স্বভাবের ভিতরেই তার আশ্রয়। তোমার মর্যাদা উনি সহ্য করতে পারেন না, তার অহৈতুক উত্তেজনা ওঁর দীনতার মধ্যে। এ যে বিধাতার অভিশাপ। তার উপরে উনি মনে-মনে সন্দেহ করেন মহারানী সুমিত্রা তোমার প্রশ্রয় পেয়েছেন বা তোমার প্রশ্রয় প্রার্থনা করতে এসেছেন।

কুমারসেন। এতদিনেও কি জানেন না সুমিত্রার পক্ষে তা অসম্ভব।

নরেশ। জানবার শক্তি যদি থাকত তাহলে হারাবার দুর্ভাগ্য তার ঘটত না।