তপতী

মঞ্জরী। কেন, ঠাকুর, ভয় কাকে?

ত্রিবেদী। যারা নতুন দেবতার পূজা চালাতে চায় তারা ভক্তির জোরের চেয়ে গায়ের জোরটা বেশি ব্যবহার করে। আমি ভালোমানুষ, দেবতার চেয়ে এই দেবতাভক্তদের ভয় করি অনেক বেশি।

গৌরী। ঠাকুর, আমি বলছিলুম এই-সব হঠাৎ-দেবতার আবার পূজা কিসের।

ত্রিবেদী। মূঢ়ে, যারা বনেদি দেবতা তাদের এত উগ্রতা নেই। সংসারে হঠাৎ-দেবতারাই সাংঘাতিক। তাদের পূজা করায় ব্যর্থতা, না-পূজা করায় সর্বনাশ। অতএব ছাড়ো তর্ক, পরো মঞ্জীর, আনো বীণা, গাঁথো মালা — পঞ্চশরের শরগুলোকে শান দেও গে।

কালিন্দী। কিন্তু তোমার মন্ত্রটি পেলে কোথা থেকে, ঠাকুর।

ত্রিবেদী। যিনি পূজা প্রচার করছেন পূজার মন্ত্ররচনা তাঁরই। আমি সেটাকে শ্রুতির দ্বারা গ্রহণ ক'রে স্মৃতির দ্বারা ব্যক্ত করব। দেখে নিয়ো, রাজসভার শ্রুতিভূষণ বলবেন, সাধু, স্মৃতিরত্নাকর বলবেন, অহো কিমাশ্চর্যম্‌!

মঞ্জরী। ও কী ও, ভাই, বাইরে যে অস্ত্রের ঝঞ্ঝনি শোনা গেল।

কালিন্দী। হয়তো ওটা সত্যকার নয়। হয়তো উৎসবের একটা কোনো পালার অভ্যাস চলছে।

গৌরী। ত্রিবেদীঠাকুর, এও বুঝি তোমাদের জালন্ধরের সৃষ্টিছাড়া কীর্তি? মীনকেতুর উৎসবে রক্তপাতের পালা?

ত্রিবেদী। সুন্দরী, জগতে এ পালা বার বার অভিনয় হয়ে গেছে। ত্রেতাযুগে এই পালায় একবার রাক্ষসে বানরে মিলে অগ্নিকাণ্ড করেছিল। কলিযুগে তাদের বংশ বেড়েছে বৈ কমে নি। যাই হোক শব্দটা ভালো লাগছে না— যাও তোমরা মন্দিরে আশ্রয় লও গে।

[ সকলের প্রস্থান


সুমিত্রা ও প্রতিহারীর প্রবেশ

সুমিত্রা। সেই প্রজাকে চাই, রত্নেশ্বর তার নাম।

প্রতিহারী। তাকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না, মহারানী।

সুমিত্রা। এই কিছুক্ষণ আগেই ছিল।

প্রতিহারী। কিন্তু কারো কাছে তার সন্ধান পাচ্ছি নে।

সুমিত্রা। দেবদত্ত ঠাকুরের ঘরে কি নেই।

প্রতিহারী। ঠাকরুন বললেন সেখানে কেউ আসে নি। ঐ যে ঠাকুর স্বয়ং আসছেন।

[প্রস্থান
দেবদত্তের প্রবেশ

সুমিত্রা। রত্নেশ্বর কোথায়।

দেবদত্ত। তাকেই খুঁজতে এসেছি।

সুমিত্রা। তাকে যে নিতান্তই পাওয়া চাই।

দেবদত্ত। সেই কারণেই তাকে পাওয়া নিতান্তই কঠিন হবে। হতভাগ্যকে বলেছিলুম আমার ঘরে আশ্রয় নিতে।