তপতী

রাজধানীতে নিয়ে আসি, কম্বল বিক্রি করি। পণ করেছি যখন হাতে কিছু টাকা হবে, পাগড়িতে লাগাব সোনার পাড়— যাব আমার শ্যালীর বাড়িতে, সেই বাঁ পায়ের লাথিটা সে ফিরিয়ে নেবে, তবে অন্য কথা। এই কথাই ভাবতে ভাবতে আসছিলেম ছাগলের পাল নিয়ে, যাচ্ছিলেম রাজধানীর দিকে। পথের মধ্যে একদল লোক ছাগলসুদ্ধ আমাকে হৈঃ হৈঃ শব্দে খেদিয়ে নিয়ে এল এইখানে, বললে এই আমাদের রাজধানী এইখানে— এই উদয়পুরে।

২। মুর্খু, মনে রাখিস, আজ থেকে এর নাম উদয়পুর নয়, কুমারপুর।

১। মনে রাখা শক্ত হবে ভাই., এখানে আমার দাদাশ্বশুরের বাড়ি, চিরদিন জানি—

৩। ভাবনা কী, নতুন রাজত্বে তোর দাদাশ্বশুরের নাম নতুন করে দেব।

১। তা যেন দিলে, কিন্তু আমার ছাগলের মহাজন থাকে সেইখানটাতে যাকে রাজধানী বলে জানতুম। সে লোকটার কাছে দেনাও আছে পাওনাও আছে। নইলে তারও নাম বদল করে নিলে খুশি হতুম।

২। আচ্ছা বেশ, খুড়োরাজের রাজত্বকালের দেনাটা কুমাররাজের রাজত্বকালে মাপ করে দেওয়া গেল।

১। আর পাওনাটা?

২। সেটা পরে দেখা যাবে— সময়মতো।

১। পেটের তাগিদ সময় মানবে না, দাদা। তা যাই হোক, তোদের মুখের কথায় রাজধানী তৈরি হয় না তো ভাই, সেরকম চেহারা দেখছি নে।

৩। সবই কি চোখে দেখতে হয়। মনে-মনে দেখ্‌।

১। কিন্তু ছাগলের দামটা মনে-মনে পেলে আমার চলবে না। কথাটা একটু বুঝিয়ে বলো, দাদা।

৩। তবে শোন্‌, কুমার এলেন তীর্থ থেকে, তবু খুড়োমহারাজ সিংহাসন আঁকড়েই রইলেন। দেখলুম, টানাটানি করতে গেলে রক্তারক্তি হবে। ঠিক করেছি এখানেই যুবরাজের রাজধানী বসিয়ে তাঁকে রাজা করব। আজই অভিষেক।

১। এই আখরোটের বনে?

২। কোথাকার গোঁয়ার এটা? রাজা যেখানেই বসবেন সিংহাসন সেইখানেই। আর তোকে যদি ইন্দ্রের আসনেও বসাই তার তলা থেকে ছাগল ডাকতে থাকবে রে।

১। না ডাকলেও সুখ হবে না ভাই,মন কেমন করবে। কিন্তু একটা কথা বুঝতে পারছি নে। ছিলেন এক রাজা, হলেন দুই রাজা, ভার সইবে? এক ঘোড়ার দুই সওয়ার, লেজের দিকে লাগাম টানবে একজন, মুখের দিকে আর একজন, জন্তুটা চলবে কোন্‌ রাস্তায়।

২। ওরে, জন্তুটার চেয়ে মুস্কিল হবে সওয়ারের— যিনি থাকবেন লেজের দিকে তাঁকে আপনিই খসে পড়তে হবে। বুঝতে পেরেছিস?

১। অনেকখানি বোঝা বাকি আছে। লেজের মানুষটা খসে পড়বার আগে খাজনা দেব কাকে।

৩। খাজনা দিতে হবে মহারাজ কুমারসেনকে।

১। তার পরে?

৩। তার পরে আর কিছুই নেই।

১। খুড়োমহারাজ তো সিংহাসনে বসে উপোস করবার ব্রত নেন নি। যখন খিদে চড়ে যাবে তখন?

২। সে কথা খুড়োমহারাজ চিন্তা করবেন, আমরা সবাই পণ করেছি খাজনা দেব মহারাজ কুমারসেনকে, আর কাউকে নয়।