কোপাই

পদ্মা কোথায় চলেছে দূর আকাশের তলায়,

        মনে মনে দেখি তাকে।

এক পারে বালুর চর,

        নির্ভীক কেননা নিঃস্ব, নিরাসক্ত—

অন্য পারে বাঁশবন, আমবন,

        পুরোনো বট, পোড়ো ভিটে,

    অনেক দিনের গুঁড়ি-মোটা কাঁঠালগাছ—

        পুকুরের ধারে সর্ষেখেত,

           পথের ধারে বেতের জঙ্গল,

দেড়শো বছর আগেকার নীলকুঠির ভাঙা ভিত,

    তার বাগানে দীর্ঘ ঝাউগাছে দিনরাত মর্মরধ্বনি।

ওইখানে রাজবংশীদের পাড়া,

    ফাটল-ধরা খেতে ওদের ছাগল চরে,

        হাটের কাছে টিনের-ছাদ-ওয়ালা গঞ্জ—

           সমস্ত গ্রাম নির্মম নদীর ভয়ে কম্পান্বিত।

               পুরাণে প্রসিদ্ধ এই নদীর নাম,

                   মন্দাকিনীর প্রবাহ ওর নাড়ীতে।

    ও স্বতন্ত্র। লোকালয়ের পাশ দিয়ে চলে যায়—

               তাদের সহ্য করে, স্বীকার করে না।

        বিশুদ্ধ তার আভিজাতিক ছন্দে

এক দিকে নির্জন পর্বতের স্মৃতি, আর-এক দিকে নিঃসঙ্গ সমুদ্রের আহ্বান।

    একদিন ছিলেম ওরই চরের ঘাটে,

      নিভৃতে, সবার হতে বহুদূরে।

           ভোরের শুকতারাকে দেখে জেগেছি,

        ঘুমিয়েছি রাতে সপ্তর্ষির দৃষ্টির সম্মুখে

               নৌকার ছাদের উপর।

    আমার একলা দিন-রাতের নানা ভাবনার ধারে ধারে

        চলে গেছে ওর উদাসীন ধারা—

    পথিক যেমন চলে যায়

           গৃহস্থের সুখদুঃখের পাশ দিয়ে, অথচ দূর দিয়ে।