পুনশ্চ

তার পরে যৌবনের শেষে এসেছি

        তরুবিরল এই মাঠের প্রান্তে।

ছায়াবৃত সাঁওতাল-পাড়ার পুঞ্জিত সবুজ দেখা যায় অদূরে।

 

 

  এখানে আমার প্রতিবেশিনী কোপাই-নদী।

        প্রাচীন গোত্রের গরিমা নেই তার।

অনার্য তার নামখানি

        কত কালের সাঁওতাল নারীর হাস্যমুখর

           কলভাষার সঙ্গে জড়িত।

               গ্রামের সঙ্গে তার গলাগলি,

           স্থলের সঙ্গে জলের নেই বিরোধ।

         তার এ পারের সঙ্গে ও পারের কথা চলে সহজে।

    শণের খেতে ফুল ধরেছে একেবারে তার গায়ে গায়ে,

           জেগে উঠেছে কচি কচি ধানের চারা।

রাস্তা যেখানে থেমেছে তীরে এসে

        সেখানে ও পথিককে দেয় পথ ছেড়ে

           কলকল স্ফটিকস্বচ্ছ স্রোতের উপর দিয়ে।

অদূরে তালগাছ উঠেছে মাঠের মধ্যে,

               তীরে আম জাম আমলকীর ঘেঁষাঘেঁষি।

       ওর ভাষা গৃহস্থপাড়ার ভাষা —

           তাকে সাধুভাষা বলে না।

        জল স্থল বাঁধা পড়েছে ওর ছন্দে,

    রেষারেষি নেই তরলে শ্যামলে।

        ছিপ্‌ছিপে ওর দেহটি

           বেঁকে বেঁকে চলে ছায়ায় আলোয়

               হাততালি দিয়ে সহজ নাচে।

    বর্ষায় ওর অঙ্গে অঙ্গে লাগে মাত্‌লামি

           মহুয়া-মাতাল গাঁয়ের মেয়ের মতো—

               ভাঙে না, ডোবায় না,

        ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে আবর্তের ঘাঘরা

           দুই তীরকে ঠেলা দিয়ে দিয়ে