৩৬

সন্ধ্যারাগে ঝিলিমিলি ঝিলমের স্রোতখানি বাঁকা

     আঁধারে মলিন হল— যেন খাপে-ঢাকা

              বাঁকা তলোয়ার ;

     দিনের ভাঁটার শেষে রাত্রির জোয়ার

এল তার ভেসে-আসা তারাফুল নিয়ে কালো জলে ;

              অন্ধকার গিরিতটতলে

                     দেওদার তরু সারে সারে ;

মনে হল সৃষ্টি যেন স্বপ্নে চায় কথা কহিবারে,

              বলিতে না পারে স্পষ্ট করি,

অব্যক্ত ধ্বনির পুঞ্জ অন্ধকারে উঠিছে গুমরি।

 

              সহসা শুনিনু সেই ক্ষণে

                      সন্ধ্যার গগনে

     শব্দের বিদ্যুৎছটা শূন্যের প্রান্তরে

মুহূর্তে ছুটিয়া গেল দূর হতে দূরে দূরান্তরে।

              হে হংস-বলাকা,

     ঝঞ্ঝা-মদরসে মত্ত তোমাদের পাখা

          রাশি রাশি আনন্দের অট্টহাসে

বিস্ময়ের জাগরণ তরঙ্গিয়া চলিল আকাশে।

              ওই পক্ষধ্বনি,

          শব্দময়ী অপ্সর-রমণী

     গেল চলি স্তব্ধতার তপোভঙ্গ করি।

          উঠিল শিহরি

     গিরিশ্রেণী তিমির-মগন ,

     শিহরিল দেওদার-বন।

 

            মনে হল এ পাখার বাণী

                  দিল আনি

               শুধু পলকের তরে

     পুলকিত নিশ্চলের অন্তরে অন্তরে

              বেগের আবেগ।