প্রজাপতির নির্বন্ধ
                                বড়ো দয়া করে চুরি করে লও শূন্য হৃদয় মোর!

নীরবালা। মশায়, এখন সিঁধ কাটার পরিশ্রম মিথ্যে; আমাদের এমন বোকা চোর পাও নি! এখন হৃদয় আছে কোথায় যে চুরি করতে আসব?

অক্ষয়। ঠিক করে বলো দেখি হতভাগা হৃদয়টা গেছে কতদূরে?

নৃপবালা। আমি জানি মুখুজ্যেমশায়। বলব? চারশো পঁচাত্তর মাইল।

নীরবালা। সেজদিদি অবাক করলে! তুই কি মুখুজ্যেমশায়ের হৃদয়ের পিছনে পিছনে মাইল গুনতে গুনতে ছুটেছিলি নাকি?

নৃপবালা। না ভাই, দিদি কাশী যাবার সময় টাইম্‌টেবিলে মাইলটা দেখেছিলুম।

অক্ষয়।                         গান। বাহার
                                চলেছে ছুটিয়া পলাতকা হিয়া,
                                    বেগে বহে শিরা ধমনী–
                                হায় হায় হায়, ধরিবারে তায়
                                    পিছে পিছে ধায় রমণী।
                                বায়ুবেগভরে উড়ে অঞ্চল,
                                লটপট বেণী দুলে চঞ্চল–
                                এ কী রে রঙ্গ, আকুল-অঙ্গ
                                        ছুটে কুরঙ্গগমনী!

নীরবালা। কবিবর, সাধু সাধু। কিন্তু তোমার রচনায় কোনো কোনো আধুনিক কবির ছায়া দেখতে পাই যেন!

অক্ষয়। তার কারণ আমিও অত্যন্ত আধুনিক! তোরা কি ভাবিস তোদের মুখুজ্যেমশায় কৃত্তিবাস ওঝার যমজ ভাই। ভূগোলের মাইল গুনে দিচ্ছিস, আর ইতিহাসের তারিখ ভুল? তা হলে আর বিদুষী শ্যালী থেকে ফল হল কী? এত বড়ো আধুনিকটাকে তোদের প্রাচীন বলে ভ্রম হয়?

নীরবালা। মুখুজ্যেমশায়, শিব যখন বিবাহসভায় গিয়েছিলেন তখন তাঁর শ্যালীরাও ঐরকম ভুল করেছিলেন, কিন্তু উমার চোখে তো অন্যরকম ঠেকেছিল! তোমার ভাবনা কিসের, দিদি তোমাকে আধুনিক বলেই জানেন!

অক্ষয়। মূঢ়ে, শিবের যদি শ্যালী থাকত তা হলে কি তাঁর ধ্যান ভঙ্গ করবার জন্যে অনঙ্গদেবের দরকার হত! আমার সঙ্গে তাঁর তুলনা!

নৃপবালা। আচ্ছা মুখুজ্যেমশায়, এতক্ষণ তুমি এখানে বসে বসে কী করছিলে?

অক্ষয়। তোদের গয়লাবাড়ির দুধের হিসেব লিখছিলুম।

নীরবালা। (ডেস্কের উপর হইতে অসমাপ্ত চিঠি তুলিয়া লইয়া) এই তোমার গয়লাবাড়ির হিসেব? হিসেবের মধ্যে ক্ষীর-নবনীর অংশটাই বেশি।

অক্ষয়। (ব্যস্তসমস্ত) না না, ওটা নিয়ে গোল করিস নে, আহা, দিয়ে যা–

নৃপবালা। নীরু ভাই, জ্বালাস নে, চিঠিখানা ওঁকে ফিরিয়ে দে, ওখানে শ্যালীর উপদ্রব সয় না।– কিন্তু মুখুজ্যেমশায়, তুমি দিদিকে চিঠিতে কী বলে সম্বোধন কর বলো-না!

অক্ষয়। রোজ নূতন সম্বোধন করে থাকি–