ছন্দের অর্থ
বেলি অবসান- কালে
কবে গিয়াছিলা জলে।
তাহারে দেখিয়া ইষত হাসিয়া
ধরিলি সখীর গলে॥ ৪॥
বিষমমাত্রার দৃষ্টান্ত কেবল একটা চোখে পড়েছে, সেও কেবল গানের আরম্ভে– শেষ পর্যন্ত টেকেনি।

চিকনকালা,                      গলায় মালা,

               বাজন নূপুর পায়।

চূড়ার ফুলে                      ভ্রমর বুলে,

              তেরছ নয়ানে চায়॥

বাংলায় সমমাত্রার ছন্দের মধ্যে পয়ার এবং ত্রিপদীই সবচেয়ে প্রচলিত। এই দুটি ছন্দের বিশেষত্ব হচ্ছে এই যে, এদের চলন খুব লম্বা। এদের প্রত্যেক পদক্ষেপে আট মাত্রা। এই আট মাত্রার মোট ওজন রেখে পাঠক এর মাত্রাগুলিকে অনেকটা ইচ্ছেমতো চালাচালি করতে পারেন।

পাষাণ মিলায়ে যায় গায়ের বাতাসে।

এর মধ্যে যে কতটা ফাঁক আছে তা যুক্তাক্ষর বসালেই টের পাওয়া যায়।

পাষাণ মূর্ছিয়া যায় গায়ের বাতাসে।

ভারী হল না।

পাষাণ মূর্ছিয়া যায় অঙ্গের বাতাসে।

এতেও বিশেষ ভিড় বাড়ল না।

পাষাণ মূর্ছিয়া যায় অঙ্গের উচ্ছ্বাসে।

এও বেশ সহ্য হয়।

সংগীত তরঙ্গি উঠে অঙ্গের উচ্ছ্বাসে।

এতেও অত্যন্ত ঠেসাঠেসি হল না।

সংগীততরঙ্গরঙ্গ অঙ্গের উচ্ছ্বাস।

অনুপ্রাসের ভিড় হল বটে কিন্তু এখনো অন্ধকূপহত্যা হবার মতো হয় নি। কিন্তু এর বেশি আর সাহস হয় না। তবু যদি আরো প্যাসেঞ্জার নেওয়া যায় তাহলে যে একেবারে পয়ারের নৌকাডুবি হবে তা নয়, তবে কিনা হাঁপ ধরবে। যথা–

দুর্দান্তপাণ্ডিত্যপূর্ণ দুঃসাধ্য সিদ্ধান্ত।

কিন্তু দুই মাত্রার ছন্দ মাত্রেরই যে এই রকম অসাধারণ শোষণশক্তি তা বলতে পারি নে। যেখানে পদক্ষেপ ঘন ঘন সেখানে ঠিক উলটো। যথা–

২    ২ ২    ২ ২    ২
ধরণীর আঁখিনীর মোচনের ছলে
২    ২ ২    ২ ২    ২
দেবতার অবতার বসুধার তলে।