ছন্দের অর্থ
মেয়ের বিছানায় শুয়ে ঘুমোনোর চেয়ে অনেক বেশি। এই কথাটাকেই আরেক ছন্দে লিখলে বিষয়টা ঠিকই থাকবে, কিন্তু বিষয়ের চেয়ে বেশি যেটা তার অনেকখানি বদল হবে।

শ্রাবণমেঘে তিমিরঘন শর্বরী,

                   বরিষে জল কাননতল মর্মরি।

জলদরব-ঝংকারিত ঝঞ্ঝাতে

                   বিজন ঘরে ছিলাম সুখ-তন্দ্রাতে,

অলস মম শিথিল তনু-বল্লরী।

                   মুখর শিখী শিখরে ফিরে স ঞ্চ রি।

এই ছন্দে হয়তো বাইরের ঝড়ের দোলা কিছু আছে কিন্তু মেয়েটির ভিতরের গভীর কথা ফুটল না। এ আরেক জিনিস হল।

ছন্দ কবিতার বিষয়টির চারদিকে আবর্তন করছে। পাতা যেমন গাছের ডাঁটার চারদিকে ঘুরে ঘুরে তাল রেখে ওঠে এও সেইরকম। গাছের বস্তু-পদার্থ তার ডালের মধ্যে, গুঁড়ির মধ্যে, মজ্জাগত হয়ে রয়েছে; কিন্তু তার লাবণ্য, তার চাঞ্চল্য, বাতাসের সঙ্গে তার আলাপ, আকাশের সঙ্গে তার চাউনির বদল, এ সমস্ত প্রধানত তার পাতার ছন্দে।

পৃথিবীর আহ্নিক এবং বার্ষিক গতির মতো কাব্যে ছন্দের আবর্তনের দুটি অঙ্গ আছে, একটি বড়ো গতি, আর একটি ছোটো গতি। অর্থাৎ চাল এবং চলন। প্রদক্ষিণ এবং পদক্ষেপ। দৃষ্টান্ত দেখাই।

শারদ চন্দ্র         পবন মন্দ,        বিপিন ভরল               কুসুমগন্ধ।

এরই প্রত্যেকটি হল চলন। এমন আটটি চলনে এই ছন্দের চাল সারা হচ্ছে। অর্থাৎ, ছয়ের মাত্রায় এ পা ফেলছে এবং আটের মাত্রায় ঘুরে আসছে। ‘শারদ চন্দ্র’ এই কথাটি ছয় মাত্রার, ‘শারদ’ তিন এবং ‘চন্দ্র’ও তিন। বলা বাহুল্য, যুক্ত অক্ষরে দুই অক্ষরের মাত্রা আছে, এই কারণে ‘শারদ চন্দ্র’ এবং ‘বিপিন ভরল’ ওজনে একই।

শারদ চন্দ্র পবন মন্দ, বিপিন ভরল কুসুমগন্ধ,
ফুল্ল মল্লি মালতি যুথি মত্তমধুপ- ভোরনী।
প্রদক্ষিণের মাত্রার চেয়ে পদক্ষেপের মাত্রার পরেই ছন্দের বিশেষত্ব বেশি নির্ভর করছে। কেননা এই আট পদক্ষেপের আবর্তন সকল ছন্দেই চলে। বস্তুত এইটেই হচ্ছে অধিকাংশ ছন্দের চলিত কায়দা। যথা–
মহাভার- তের কথা অমৃত স- মান,
কাশীরাম দাস কহে শুনে পুণ্য- বান্‌।

এও আট পদক্ষেপ।

এই জাত নির্ণয় করতে হলে চালের দিকে ততটা নয় কিন্তু চলনের দিকেই দৃষ্টি দিতে হবে। দিলে দেখা যাবে, ছন্দকে মোটের